শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১১ পূর্বাহ্ন
নোটিস :
Wellcome to our website...

ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বাঁচার আকুতি

রিপোর্টার
আপডেট : বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। দুই দেশে ধসে পড়া হাজার হাজার ভবনের নিচ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে একের পর এক লাশ। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত মানুষের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও এখনও নিখোঁজ আছেন হাজার হাজার মানুষ। ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে প্রতিনিয়ত আসছে বাঁচার আকুতি। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া আর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেককে উদ্ধারের সময় যেন দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে এর আগে খুব কমই পড়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার মানুষ। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাউত ওকতায়ে বলেছেন, তুরস্কে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হাজারও ভবনের ৩ লাখ ৮০ হাজারের বেশি বাসিন্দা ইতোমধ্যে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, হোটেল, শপিং মল, স্টেডিয়াম, মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন।

dhakapost
বন্দরের চারপাশের বাতাস এখনও কালো ধোঁয়া আর পেট্রোলের পোড়া গন্ধ রয়েছে

♦ জ্বলছে বন্দর

ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্কের বন্দর থেকে কন্টেনারবাহী বিভিন্ন জাহাজ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশটিতে সোমবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল গাজিয়ানতেপ শহরের কাছের একটি বন্দর থেকে জাহাজগুলো সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও গাজিয়ানতেপের ইসকেনদেরাউন বন্দর জ্বলছে। যে কারণে এই বন্দরে জাহাজ নোঙ্গর করা যাচ্ছে না বলে মঙ্গলবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ছবিতে দেখা যায়, কালো ঘন ধোঁয়া বন্দরের আকাশে উড়ছে। বন্দরে রাখা কিছু কন্টেনারে আগুন ধরে গেছে। মঙ্গলবার সকালের দিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিনিধি কুয়েন্টিন সমারভিলে বলেন, বন্দরের চারপাশের বাতাস এখনও কালো ধোঁয়া আর পেট্রোলের পোড়া গন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর গতকাল থেকেই এই বন্দর জ্বলছে। ভূমিকম্পের কারণে কন্টেনার উল্টে গিয়ে বন্দরে আগুন ধরে যায়।

দেশটির প্রধান জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এপি মোলার মারস্ক এক বিবৃতিতে বলেছে, বন্দরে কখন স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে তা স্পষ্ট নয়। কার্গোটি তুরস্কের অন্যান্য বন্দরের মাধ্যমে মিসরের পোর্ট সাইদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সড়ক এবং বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকারি ও দাতব্য সংস্থাগুলোর ওই অঞ্চলে সহায়তা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়বে।

dhakapost
ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ২৬১ জনে পৌঁছেছে

♦ নিহত বেড়ে ৫ হাজার ২৬১

সোমবারের ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ২৬১ জনে পৌঁছেছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সানা বলছে, সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭১২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স নামে পরিচিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হোয়াইট হেলমেট বলছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় ৯০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আর দামেস্কের সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৮১২ জন নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তার দেশে ভূমিকম্পে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৫৪৯ জনের। এছাড়া এতে আহত হয়েছেন আরও ২৫ হাজারের বেশি মানুষ।

♦ সাড়ে ৫ হাজার ভবন ধস

তুরস্কে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট। ভূমিকম্পের পর শতাধিক আফটার শকের কারণে দেশটিতে আরও কয়েক হাজার ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পে দেশটির সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

♦ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মেয়ের হাত ধরে আছেন বাবা

dhakapost
এএফপির ফটোগ্রাফার অ্যাডাম আলতানের তুলে আনা কয়েকটি ছবি নাড়া দিয়েছে সবাইকে, মৃত মেয়ের হাত ধরে বসে থাকা এক বাবার এই ছবি কাঁদিয়েছে অনেক মানুষকে

চারিদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ। উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক মরদেহ। দু-একজন জীবিত লোকও উদ্ধার হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের ভেতরে স্বজনের খোঁজ করছেন অনেকে। গত দুই দিন ধরে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক-সিরিয়ার চিত্রটা প্রায় একই রকম। যার কিছু চিত্র নিজেদের ছবিতে তুলে আনছেন ফটোসাংবাদিকরা।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এএফপির ফটোগ্রাফার অ্যাডাম আলতানের তুলে আনা কয়েকটি ছবি নাড়া দিয়েছে সবাইকে। ছবিগুলো খুবই হৃদয়বিদারক। সেগুলোতে উঠে এসেছে এক অসহায় বাবার আর্তনাদের ছবি, উঠে এসেছে প্রকৃতির কাছে মানুষের বারবার অসহায়ত্বের চিত্র।

অ্যাডাম আলতানের ছবিতে দেখা যায়, শক্তিশালী ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড তুরস্কের শহর কাহরামানমারাসের একটি বিধ্বস্ত ভবনের সামনে কারো হাত ধরে বসে আছেন এক ব্যক্তি। তার নাম মেসুত হেনসার। যার হাত ধরে তিনি বসে আছেন সে তার ১৫ বছর বয়সী কন্যা ইরকাম, যে চাপা পড়ে আছে কংক্রিটের স্ল্যাবের নিচে; যে আর বেঁচে নেই।

♦ সময় ফুরিয়ে আসছে, চ্যালেঞ্জ শীত আর বৃষ্টি

তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস্তূপের নিচে চাপা পড়াদের উদ্ধারে সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। এরমধ্যে উদ্ধারকারীদের কাজ আরও কঠিন করে তুলছে তুষারপাত ও বৃষ্টি।

তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তে সোমবার ভোরের ভূমিকম্পে ৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে মৃতের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যেতে পারে। জীবিতদের উদ্ধারে উদ্ধারকারী দলগুলো তাদের তৎপরতা জোরদার করেছে।

dhakapost
তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস্তূপের নিচে চাপা পড়াদের উদ্ধারে সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত

আদানা নামে একটি শহরে রাতভর ভারী যন্ত্রপাতির সাহায্যে উদ্ধার কাজ চলেছে। ধসে পড়া ভবন এবং কংক্রিটের বিশাল স্ল্যাবগুলো আলোকিত করে রাখছেন উদ্ধারকারীরা। তুরস্কের গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে এই একই দৃশ্য।

যখন কাউকে জীবিত উদ্ধার করা যাচ্ছে বা কারও লাশ পাওয়া যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা কাজ বন্ধ রেখে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করে উঠছেন। গোটা আদানা শহরে এখন গৃহহীন মানুষ। ঘরবাড়ি টিকে গেছে এমন অনেকে ফের ভূমিকম্পের ভয়ে ঘরেও ফিরতে চাচ্ছেন না।

খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন এমন অনেকের পায়ে জুতা নেই, ভালো শীতবস্ত্র নেই, ফোনের চার্জার নেই। এদিকে সপ্তাহ শেষে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নামবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি তুরস্কের মারাস শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। গাড়িগুলো খুব ধীরগতিতে সামনের দিকে এগোতে পারছে। ভেজা রাস্তায় লাল ব্রেক লাইটের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে বারবার। খুবই স্বল্পসংখ্যক উদ্ধারকারী এখন পর্যন্ত দক্ষিণ তুরস্কের এই অংশে পৌঁছাতে পেরেছেন।

উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় নানা সরঞ্জাম বোঝাই করে গাড়িতে ওই শহরে যাওয়ার পথে একটি দলের একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, আমরা জীবিতদের উদ্ধারে কাজ শুরু করার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি কতটা খারাপ সে সম্পর্কে কোনো ধারণা তখনো তাদের নেই।

dhakapost
বিশ্বের ৭০টি দেশ ইতোমধ্যে সহায়তার প্রস্তাব কিংবা সহায়তা পাঠিয়ে দিয়েছে তুরস্কে

♦ তুরস্ক-সিরিয়ায় সর্বশেষ আরও কিছু তথ্য

• স্মরণকালের ভয়াবহ ‍ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর দুই দেশে শতাধিক আফটার শক অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে একটি আফটার শকের মাত্রা ছিল সাড়ে ৭।

• উভয় দেশে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও মিশন দুই দেশে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করায় প্রাণহানি ২০ হাজারও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

• তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি জেলাকে দুযোর্গ অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতার কারণে এসব জেলায় আগামী তিন মাস ধরে জরুরি অবস্থা জারি থাকবে।

• যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ৭০টি দেশ ইতোমধ্যে সহায়তার প্রস্তাব কিংবা সহায়তা পাঠিয়ে দিয়েছে তুরস্কে। এসব দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এরদোয়ান।

• ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আসছে উদ্ধারের আকুতি। ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকা অনেকেই দেশটিতে কর্মরত সাংবাদিক এবং স্বজনদের কাছে মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছেন। ইস্তাম্বুলের একজন সাংবাদিক বলেছেন, ভেঙে পড়া ভবনে আটকা অনেকের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা, ভয়েস রেকর্ড পেয়েছেন তিনি। এসব বার্তায় তারা উদ্ধারের আকুতি জানিয়েছেন।

• ডব্লিউএইচও বলছে, ভূমিকম্পে উভয় দেশে ২ কোটির বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের মধ্যে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যাই ১০ লাভের বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থা।

• তুমুল ঠান্ডা আবহাওয়া সত্ত্বেও… উদ্ধারকারী দল বেঁচে থাকা লোকজনের খোঁজে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে।

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সর্বশেষ তথ্য জানার জন্য ঢাকাপোস্টের সঙ্গে থাকুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর