‘বেগম পাড়ার বাড়ির মালিকদের তালিকা বারবার চেয়েও পাচ্ছি না’

  • আপডেট সময় : ০৪:৩১:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
  • / 223
প্রবাসী কণ্ঠ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কানাডার ‘বেগম পাড়া’য় যেসব বাংলাদেশি নাগরিকের বাড়ি রয়েছে, তাদের নামের তালিকা বারবার চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

কানাডার ‘বেগমপাড়া’ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, তাদের কাছে তালিকা আছে। ওই তালিকা নিয়ে কাজ চলছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কানাডায় বেগম পাড়ায় কাদের বাড়ি রয়েছে, এ বিষয়ে বারবার তালিকা চেয়েও পাচ্ছি না। যিনি এ কথা বলেছিলেন, তার কাছ থেকে তালিকা চেয়েও পাচ্ছি না, আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব? তালিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে তো আমাদের কোনো ম্যাকানিজম নেই। আমরা তালিকা পেলে অবশ্যই দেখব। যতটুকু পেয়েছি, তা নিয়ে কাজ করছি।

উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডার টরন্টোতে কয়েকশ বাংলাদেশি বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন। এসব বাড়ির অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট পরিবারের নারী সদস্যের নামে। এজন্য এটি ‘বেগমপাড়া’ নামে পরিচিত। সে দেশে অর্থ পাচারকারীদের বেশিরভাগই আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী। অর্থ পাচারকারীদের তালিকা ও তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে স্বপ্রণোদিত হয়ে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর রুল জারি করেন উচ্চ আদালত।

এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথম দফায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় দুদক।

এরপর কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয়কারী বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারও চিঠি দেয় দুদক।

হাইকোর্টের নির্দেশনায় দুদক থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও পত্রিকায় প্রকাশিত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, ব্যাংক ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত তার মূলধন হারানোর ফলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ এ দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।

বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্স ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিকের নামও উঠে এসেছে।  এই ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণ রোধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। এতে একদিকে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে দেশীয় সম্পদ ফেরত আনার পাশাপাশি অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত এ কঠিন কাজ সম্পন্ন করা এবং কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা সম্ভব নয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তথ্য কূটনৈতিক চ্যানেলে সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরবরাহ করলে কমিশন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে পারবে। এ অবস্থায় ইনভেস্টমেন্ট কোটায় যেসব বাংলাদেশি নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য/তালিকা আমাদের সকল দূতাবাসের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যাবে কি না তা জানানোর জন্য কমিশনের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এর আগে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কানাডায় টাকা পাচার করে বাড়িঘর বানিয়েছে এ রকম ২৮টি ঘটনা আছে। তবে এর মধ্যে রাজনীতিবিদ মাত্র চারজন। বাকিরা সরকারি কর্মচারী ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ী।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪৯৬৫ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। এই হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

‘বেগম পাড়ার বাড়ির মালিকদের তালিকা বারবার চেয়েও পাচ্ছি না’

আপডেট সময় : ০৪:৩১:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

কানাডার ‘বেগম পাড়া’য় যেসব বাংলাদেশি নাগরিকের বাড়ি রয়েছে, তাদের নামের তালিকা বারবার চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

কানাডার ‘বেগমপাড়া’ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, তাদের কাছে তালিকা আছে। ওই তালিকা নিয়ে কাজ চলছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কানাডায় বেগম পাড়ায় কাদের বাড়ি রয়েছে, এ বিষয়ে বারবার তালিকা চেয়েও পাচ্ছি না। যিনি এ কথা বলেছিলেন, তার কাছ থেকে তালিকা চেয়েও পাচ্ছি না, আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব? তালিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে তো আমাদের কোনো ম্যাকানিজম নেই। আমরা তালিকা পেলে অবশ্যই দেখব। যতটুকু পেয়েছি, তা নিয়ে কাজ করছি।

উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডার টরন্টোতে কয়েকশ বাংলাদেশি বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন। এসব বাড়ির অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট পরিবারের নারী সদস্যের নামে। এজন্য এটি ‘বেগমপাড়া’ নামে পরিচিত। সে দেশে অর্থ পাচারকারীদের বেশিরভাগই আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী। অর্থ পাচারকারীদের তালিকা ও তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে স্বপ্রণোদিত হয়ে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর রুল জারি করেন উচ্চ আদালত।

এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথম দফায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় দুদক।

এরপর কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয়কারী বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারও চিঠি দেয় দুদক।

হাইকোর্টের নির্দেশনায় দুদক থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও পত্রিকায় প্রকাশিত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, ব্যাংক ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত তার মূলধন হারানোর ফলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ এ দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।

বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্স ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিকের নামও উঠে এসেছে।  এই ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণ রোধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। এতে একদিকে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে দেশীয় সম্পদ ফেরত আনার পাশাপাশি অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত এ কঠিন কাজ সম্পন্ন করা এবং কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা সম্ভব নয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশিদের তথ্য কূটনৈতিক চ্যানেলে সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরবরাহ করলে কমিশন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে পারবে। এ অবস্থায় ইনভেস্টমেন্ট কোটায় যেসব বাংলাদেশি নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য/তালিকা আমাদের সকল দূতাবাসের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া যাবে কি না তা জানানোর জন্য কমিশনের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এর আগে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কানাডায় টাকা পাচার করে বাড়িঘর বানিয়েছে এ রকম ২৮টি ঘটনা আছে। তবে এর মধ্যে রাজনীতিবিদ মাত্র চারজন। বাকিরা সরকারি কর্মচারী ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ী।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪৯৬৫ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। এই হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি।