শপথ নিলেন নিউইয়র্কের মেয়র
- আপডেট সময় : ০৫:০৫:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২
- / 228
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনা শনাক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অত্যন্ত স্বল্প আয়োজনে শপথ নিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির ১১০তম মেয়র এরিক অ্যাডামস। নতুন বছরের প্রথম দিন শনিবার (১ জানুয়ারি) ম্যানহাটানের টাইমস স্কয়ারে শপথ নেন এরিক অ্যাডামস।
এই তিন নির্বাচিত নেতা মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) শপথ অনুষ্ঠান স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা কোনভাবেই জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝঁকিপূর্ণ এমন কাজ করতে পারি না। অবস্থার উন্নতি হলে আমরা এই অনুষ্ঠান সকলে মিলে করতে চাই।
প্রতি চার বছর অন্তর সিটি হলের সামনে উন্মুক্ত প্লাজায় উৎসবমুখর পরিবেশে নবনির্বাচিত মেয়রের শপথ অনুষ্ঠান হয় বিপুল সংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতিতে। কিন্তু এ বছর নিউইয়র্ক সিটির তিনজন প্রধান ব্যক্তিই ব্রুকলীনের হওয়ায় তারা ৩০০০ আসন বিশিষ্ট ব্রুকলীনের কিংস থিয়েটারে এই শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা ঘোষণা করেন। এই তিন নেতা হলেন মেয়র এরিক এডামস, তিনি এখনো ব্রুকলীন বরো প্রেসিডেন্ট, কম্পট্রলার ব্র্যাড ল্যান্ডার যিনি এখনো ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ এর সিটি কাউন্সিলম্যান এবং পুনর্নিবাচিত পাবলিক এডভোকেট জুমানি উইলিয়ামস। তবে তারা অফিসিয়ালি শপথ গ্রহণ করে ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এদিন অত্যন্ত স্বল্প আয়োজনে শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে মেয়র কোনো বক্তব্যও রাখেননি। এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্ক সিটির ৩২৬ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র হিসাবে যাত্রা শুরু করলেন। ২৮ বছর আগে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র নির্বাচিত হন ডেভিড ডিনকিন। এরিক অ্যাডামস সদ্য বিদায়ী মেয়র বিল ডি ব্ল্যাজিও’র স্থলাভিষিক্ত হলেন।
নতুন মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের সময় কোন বিষয়ে মন্তব্য করেননি এরিক অ্যাডামস। সাংবাদিকদের প্রশ্নও তিনি এড়িয়ে গেছেন। তবে শপথ গ্রহণের দুইদিন আগে তিনি বলেছেন, নতুন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সদস্য বিদায় মেয়র বিল ডি ব্ল্যাজিওর করোনা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত তিনি অব্যাহত রাখবেন। যার মধ্যে ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট অন্যতম।
করোনা মোকাবেলায় পরিকল্পনা হিসেবে নিউ ইয়র্কের নতুন মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, ‘আমরা নতুন করে আর লকডাউন বা শাটডাউনের কথা ভাবছি না। আমরা স্কুলগুলো বন্ধ না রাখার চেষ্টা করছি; যাতে শিক্ষা কার্যক্রম সচল থাকে। এছাড়া সিটির কর্মীদের টিকা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিকে কর্মী সংকটে কয়েকটি সাবওয়ে ট্রেন বন্ধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কোন কিছুই বন্ধ না করতে। তিনি বলেন, যেখানে ভিড় হচ্ছে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। জনসাধারণকে বলছি আপনারা গণজমায়েত এড়িয়ে চলুন। দ্রুত টিকা নিন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। নিউইয়র্ক সিটি একটি চমৎকার শহর। আমরা একটি ইতিবাচক প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছি।’
এরিক অ্যাডামসের জন্ম ১৯৬০ সালে কুইন্সের এক শ্রমজীবী পরিবারে। তার মা ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আর বাবা কসাই হিসেবে কাজ করতেন। এরিক কিশোর বয়সে একটি অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি গ্রেপ্তার হন। নিউইয়র্ক পুলিশের দুই সদস্য তাঁকে মারধরও করেছিলেন তখন। আর সেসময় থেকেই নিউইয়র্ক পুলিশে যোগ দেওয়ার সংকল্প করেন এ কৃষ্ণাঙ্গ। আশির দশকের মাঝামাঝি পুলিশে যোগ দেন তিনি। এরপর ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৬ সালে পুলিশের ক্যাপ্টেন পদে থেকে অবসরে যান এরিক অ্যাডামস।
১৯৯৫ সালে এরিক এডামস পুলিশের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে ‘হান্ড্রেড ব্ল্যাকস ইন ল এনফোর্সমেন্ট হু কেয়ার’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এটি এখনো বহাল আছে। অবসরে যাবার পর নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন এরিক অ্যাডামস। ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তখন থেকেই নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন এরিক অ্যাডামস।
এরিক অ্যাডামস প্রশাসনের ইতিমধ্যে রাজনৈতিক নিয়োগ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ, দক্ষিণ এশিয় এবং মুসলিম কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
নতুন মেয়র হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এরিক অ্যাডামসের সামনে যে চ্যালেঞ্জটি সবচেয়ে বড়, তা হলো বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন-এর ভয়াবহ তাণ্ডব শুরুর পর থেকে নিউ ইয়র্ক সিটির করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রায় প্রতিদিন রেকর্ডসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সিটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। সিটি স্কুলগুলো সশরীরে পাঠ্যক্রম চালানোর বিষয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শহসিটির নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে করোনা পরিস্থিতি কার্যকর উপায়ে প্রতিরোধ করা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ বিষয়টিকে নতুন মেয়রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা। তবে কেউ কেউ নিউইয়র্ক সিটিতে বন্দুক হামলার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেছেন।