রাশিয়ার গ্যাসে কতটা নির্ভর করে ইউরোপ?

ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্টসহ পশ্চিমাদের দূরত্ব যেন বেড়েই চলেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারা একের পর এক বৈঠকে বসছেন। দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছেই। গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর ইউরোপের নির্ভরতা নিয়ে নতুন করে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর দূরত্ব বাড়লে এই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হতে পারে কি না, সেটা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সবচেয়ে বড় গ্যাস কোম্পানি গ্যাসপ্রোম। অনেক দিন ধরে ইউরোপে একচেটিয়ে ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরো ইউরোপে যে পরিমাণ গ্যাসের ব্যবহার হয়, তার ৪৩ শতাংশ গ্যাসপ্রোমের। রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের সাহায্যে যা গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া যদি ইউরোপে গ্যাস সরবাহ এক দিনের জন্যও বন্ধ করে দেয়, তাহলে প্রবল সমস্যায় পড়বে ইউরোপ।
এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস সরবাহ বন্ধ করা হবে কি না—এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, সে সম্ভাবনা আছে। ইউরোপকে সংকটে ফেলতে রাশিয়া সেই কাজ করতেই পারে।
আরেকটি অংশ বলছে, রাশিয়ার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে গ্যাস এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রির ওপর। ফলে রাশিয়া জানে, গ্যাস দেওয়া বন্ধ করলে অর্থনীতিতে ধস নামবে। রাশিয়া সেই চাপ নেবে না।
রাশিয়ার গ্যাসের ওরপ পূর্ব ইউরোপ প্রায় পুরোপুরি নির্ভরশীল। পশ্চিম ইউরোপে অবশ্য নরওয়ে, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা থেকেও গ্যাস আসে। তবে সেখানেও রাশিয়ার গ্যাসের ভালোই প্রয়োজন হয়। রাশিয়ার গ্যাসের পুরোটাই আসে গ্যাসপ্রোমের মাধ্যমে। গ্যাসপ্রোমে সব মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ কর্মী কাজ করেন। এর মালিক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অত্যন্ত কাছের বন্ধু। এই কারণেই গ্যাস নিয়ে চিন্তায় ইউরোপ।
সম্প্রতি জার্মানির সঙ্গে নর্ডস্ট্রিম-২ পাইপলাইনের চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে রাশিয়ার। সেই গ্যাসলাইন চালু হলে রাশিয়ার ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে জার্মানি।
তবে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়েছে যে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা করে তাহলে জার্মানি নর্ডস্ট্রিম-২ পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস নেবে না। এ বিকল্প হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও অস্ট্রেলিয়ায় গ্যাসের সন্ধান করছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও শীতকালে সেই চেষ্টা খুব একটা কাজে আসবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়া মনে করে, বরাবরই গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদকে কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে ইউরোপকে তাদের কাছ থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ নিতেই হবে।