ঢাকা ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোনো হত্যাই দায়মুক্তি পেতে পারে না : ভলকার তুর্ক

  • আপডেট সময় : ০৮:১০:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
  • / 32
প্রবাসী কণ্ঠ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুটনৈতিক প্রতিবেদক :

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, কোনো হত্যাই দায়মুক্তি পেতে পারে না এবং আরো বলেন অবশ্যই বাংলাদেশে সংস্কার টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে। ফলে বিগত দুই দশকের মানবাধিকারের লঙ্ঘনের চর্চার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। এক্ষেত্রে শাসনব্যবস্থা, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক নীতিতে মানবাধিকারকে বিবেচনায় রাখতে হবে, মানুষের প্রত্যাশা ও সুযোগও এ বিষয়ে অনেক। তিনি অবশ্যই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব না দেওয়ার আহ্বান জানান। বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তুর্ক বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের উপস্থিতি জোরদার করার বিষয়েও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের উপস্থিতি কী উপায়ে নিশ্চিত করা হবে, এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের জোরালো উপস্থিতি থাকলে তা আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার-পরিবর্তনের এ সময়ে বিচার, সংহতি এবং ক্ষত নিরসনে সুপারিশ দিতে পারবে।

তিনি বুধবার বিকেলে ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান তার এ সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, বিচার বিভাগ, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান এমন একসময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন ছাত্রদের নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিষয়ে সংস্থাটির ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’ বাংলাদেশে ঘটনাগুলোর মানবাধিকারের দিক তদন্ত করছে। তিনি গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে সই করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অসমতা, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার চক্র, প্রান্তিকীকরণ, দুর্নীতি, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন-এসব হতে হবে এখন অতীত। দমনমূলক আইন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা প্রয়োজন। কেবল প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মব জাস্টিস গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রক্রিয়ায় যত হত্যা করা হয়েছে, এরও তদন্ত হতে হবে। মব জাস্টিস কোনো আইন-আদালত নয়; এটি বিচারবহির্ভূত কাজ, যা আইনের শাসনের পরিপন্থি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী একটি আপেক্ষিপ দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের হিরো নেলসন ম্যান্ডেলাকে অনেকে সন্ত্রাসী মনে করে। পুলিশ হত্যায় দায়মুক্তি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো হত্যায়ই দায়মুক্তি পেতে পারে না।

ভলকার তুর্ক বলেন, ছাত্রদের রাজপথে আন্দোলনের মূল দাবি ছিল মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার। ছাত্র, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আমার আলোচনায় মনে হয়েছে, এবারের পরিবর্তন ভিন্নতর হবে। তিনি সাইবার নিরাপত্তা আইন পুনর্বিবেচনা এবং কথা বলার কারণে বিগত দিনে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারকে স্বাগত জানান। পরিবর্তনের এ সময়ে শ্রেণি, লিঙ্গ, বর্ণ, রাজনৈতিক আদর্শ, ধর্ম-নির্বিশেষে সবার কথা শোনা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আন্দোলনে নারীদের কণ্ঠস্বর দৃশ্যমান ছিল। নারীকে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের প্রতিবাদকালে নারী-শিশুসহ অনেকে মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। বিচারের মাধ্যমে এসব ভিকটিমের ক্ষত নিরসনের চেষ্টা চালাতে হবে। আয়নাঘরকে জাদুঘরে রূপান্তরের লক্ষ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন তিনি। তুর্ক বলেন, বিচার অবশ্যই সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধনের পরামর্শ আমার দপ্তর দিয়েছে। এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলুপ্তির পক্ষে আমার দপ্তর।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই মামলা দেওয়া সমীচীন নয়। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা উদ্বেগজনক। অতীতের ধরনের পুনরাবৃত্তি না করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা মামলা যাচাইয়ে কমিটি করা যেতে পারে। উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ অগ্রাধিকারে থাকা চাই। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ৫ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তদন্ত করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

কোনো হত্যাই দায়মুক্তি পেতে পারে না : ভলকার তুর্ক

আপডেট সময় : ০৮:১০:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

কুটনৈতিক প্রতিবেদক :

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, কোনো হত্যাই দায়মুক্তি পেতে পারে না এবং আরো বলেন অবশ্যই বাংলাদেশে সংস্কার টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে। ফলে বিগত দুই দশকের মানবাধিকারের লঙ্ঘনের চর্চার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। এক্ষেত্রে শাসনব্যবস্থা, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক নীতিতে মানবাধিকারকে বিবেচনায় রাখতে হবে, মানুষের প্রত্যাশা ও সুযোগও এ বিষয়ে অনেক। তিনি অবশ্যই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব না দেওয়ার আহ্বান জানান। বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তুর্ক বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের উপস্থিতি জোরদার করার বিষয়েও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের উপস্থিতি কী উপায়ে নিশ্চিত করা হবে, এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের জোরালো উপস্থিতি থাকলে তা আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার-পরিবর্তনের এ সময়ে বিচার, সংহতি এবং ক্ষত নিরসনে সুপারিশ দিতে পারবে।

তিনি বুধবার বিকেলে ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান তার এ সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, বিচার বিভাগ, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান এমন একসময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন ছাত্রদের নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বিষয়ে সংস্থাটির ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’ বাংলাদেশে ঘটনাগুলোর মানবাধিকারের দিক তদন্ত করছে। তিনি গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে সই করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অসমতা, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার চক্র, প্রান্তিকীকরণ, দুর্নীতি, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন-এসব হতে হবে এখন অতীত। দমনমূলক আইন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা প্রয়োজন। কেবল প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মব জাস্টিস গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রক্রিয়ায় যত হত্যা করা হয়েছে, এরও তদন্ত হতে হবে। মব জাস্টিস কোনো আইন-আদালত নয়; এটি বিচারবহির্ভূত কাজ, যা আইনের শাসনের পরিপন্থি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সন্ত্রাসী একটি আপেক্ষিপ দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের হিরো নেলসন ম্যান্ডেলাকে অনেকে সন্ত্রাসী মনে করে। পুলিশ হত্যায় দায়মুক্তি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো হত্যায়ই দায়মুক্তি পেতে পারে না।

ভলকার তুর্ক বলেন, ছাত্রদের রাজপথে আন্দোলনের মূল দাবি ছিল মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার। ছাত্র, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আমার আলোচনায় মনে হয়েছে, এবারের পরিবর্তন ভিন্নতর হবে। তিনি সাইবার নিরাপত্তা আইন পুনর্বিবেচনা এবং কথা বলার কারণে বিগত দিনে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারকে স্বাগত জানান। পরিবর্তনের এ সময়ে শ্রেণি, লিঙ্গ, বর্ণ, রাজনৈতিক আদর্শ, ধর্ম-নির্বিশেষে সবার কথা শোনা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আন্দোলনে নারীদের কণ্ঠস্বর দৃশ্যমান ছিল। নারীকে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের প্রতিবাদকালে নারী-শিশুসহ অনেকে মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। বিচারের মাধ্যমে এসব ভিকটিমের ক্ষত নিরসনের চেষ্টা চালাতে হবে। আয়নাঘরকে জাদুঘরে রূপান্তরের লক্ষ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন তিনি। তুর্ক বলেন, বিচার অবশ্যই সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধনের পরামর্শ আমার দপ্তর দিয়েছে। এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলুপ্তির পক্ষে আমার দপ্তর।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই মামলা দেওয়া সমীচীন নয়। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা উদ্বেগজনক। অতীতের ধরনের পুনরাবৃত্তি না করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা মামলা যাচাইয়ে কমিটি করা যেতে পারে। উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ অগ্রাধিকারে থাকা চাই। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ৫ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তদন্ত করছে।