ইউক্রেনে জয়ের জন্য রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন নেই
- আপডেট সময় : ০৭:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
- / 124
প্রবাসীকণ্ঠ ডেসক:
টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ আগ্রাসন বন্ধের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং এই পরিস্থিতিতে অনেকেই পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন।
তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুংকার দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে বিজয়ের জন্য রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। রুশ সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়লে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (৭ জুন) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইউক্রেনে বিজয় নিশ্চিত করতে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার দরকার নেই বলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার জানিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে মারাত্মক এই সংঘাত যে পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হবে না, সে বিষয়ে এটিই এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের সবচেয়ে জোরালো ইঙ্গিত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসের মাথায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, রাশিয়ার ভূখণ্ড রক্ষার জন্য তথা আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত।
এছাড়া আরও বেশ কয়েকবারই পুতিন পুরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে হুমকি দিয়েছিলেন।
সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে মডারেটর সের্গেই কারাগানভ নামের একজন প্রভাবশালী রাশিয়ান বিশ্লেষকের পামাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, তিনি এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের পরিস্থিতি এখনও দেখেন না।
রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘(পরমাণু অস্ত্রের) ব্যবহার কেবল ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেই সম্ভব – দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকির ক্ষেত্রে। আমি মনে করি না, এমন কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি এখনও হয়েছে। এমন (অস্ত্র ব্যবহারের) কোনও প্রয়োজন নেই।’
২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রাশিয়া। এছাড়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে মস্কো।
রাশিয়া এখন ক্রিমিয়ার পাশাপাশি এবং এই চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে এখন তার নিজস্ব ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করে। আর পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত ইউক্রেন যদি এসব ভূখণ্ড পুনরায় দখলে নিতে চায় তাহলে সেটি এই অঞ্চলে পারমাণবিক হামলার আশঙ্কাকেই বাড়িয়ে তোলে।
অবশ্য ইউক্রেন ক্রিমিয়াসহ রাশিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে এবং ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার পারমাণবিক মতবাদ পরিবর্তন না করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন না বলে পুতিন জানিয়েছেন। মূলত কোন ধরনের পরিস্থিতিতে এই অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে সেটিই এই মতবাদের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে
প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেন, প্রয়োজনে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারে, যদিও তিনি বর্তমান সময়ে এমন কিছু করার প্রয়োজন দেখেন না।
উল্লেখ্য, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। বিশ্বের মোট ১২ হাজার ১০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেডের মধ্যে ১০ হাজার ৬০০টিরও বেশি এই দুই দেশের অস্ত্র ভাণ্ডারে রয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে চীনের হাতে। এরপরই পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশের তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে ফ্রান্স এবং ব্রিটেন।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ার কাছে প্রায় এক হাজার ৫৫৮টি নন-স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। তবে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে রাশিয়ার এই ধরনের অস্ত্রের সঠিক পরিসংখ্যান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনও দেশই যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করেনি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকে রাশিয়া বার বার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে আসছে। এছাড়া রাশিয়ার এই সতর্কবার্তাকে গুরুত্বের সাথে নেওয়ার জন্য পশ্চিমা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।