দেশের প্রবাসী আয় সংগ্রহের প্রধান হাব ধরা হয় মধ্যপ্রাচ্যকে। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। এমনকি গত অর্থবছরের বেশিরভাগ সময় প্রবাসী আয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বছর শেষে শীর্ষ অবস্থানে ফিরেছিল সৌদি আরব।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। একই সময়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে ৪৬ দশমিক ৫৮, ইতালি থেকে ৭ দশমিক ৭৩ এবং জার্মানি থেকে কমেছে ৭ শতাংশ। এ ছাড়া মাসিক হার বিবেচনায় গেলে যুক্তরাজ্য থেকেও প্রবাসী আয় কমেছে ৩২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয় কমছে। এমনকি হুন্ডির প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকেও প্রবাসী আয় কমতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থপাচার রোধ ও দেশে বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশে ৪৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। অথচ, গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিলো ৫৬৭ কোটি ২৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমেছে ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। দেশের রেমিট্যান্স সংগ্রহের প্রধান হাব মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে প্রবাসী আয় কমেছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ব্যতিক্রমী ওমানে প্রথম মাসে প্রবাসী আয় বাড়লেও পরের দুই মাস ধারাবাহিক কমেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলা বাজারে ডলারের দরে বড় ব্যবধান থাকায় মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলে আস্থা হারিয়েছেন। অতি মুনাফার আসায় হুন্ডিতে ঝুঁকছেন বেশির ভাগ প্রবাসী। পাশাপাশি নির্বাচনী বছর হওয়ায় অর্থপাচারও বেড়েছে। এতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নির্বাচনী বছর হওয়ায় দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। এটিকে সহায়তা করছে হুন্ডি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে ব্যাংকগুলো বাফেদার নির্ধারিত রেটের বেশিতে ডলার কিনছে না। এ জন্য মানুষ হুন্ডি এজেন্টদের কাছে ডলার বিক্রি করছে। তাই ডলারের দর বাজার ভিত্তিক হওয়ার দরকার বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। অথচ, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৪৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।
আর অস্ট্রেলিয়া থেকে গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৪৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
একইভাবে রেমিট্যান্স কমেছে ইতালি থেকেও। দেশটি থেকে গত অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ রেমিট্যান্স কমেছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর জার্মানি থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম ৩ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৬০ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ২২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ রেমিট্যান্স কমেছে ৭ শতাংশ।
এদিকে, ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় বেড়েছে। যদিও আগস্ট মাস বিবেচনা করলে সেপ্টেম্বর মাসে এই দেশটি থেকেও রেমিট্যান্স কমেছে ৩২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
তথ্য বলছে, দেশটি থেকে গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ একবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। কিন্তু গত আগস্টে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। আর সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বরে এসেছে ১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা।