বন্ধ হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ!
- আপডেট সময় : ০৪:৪৯:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩
- / 156
চিরতরে বন্ধ হতে যাচ্ছে বেসরকারি এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম। বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (বেবিচক) পাওনা, নানা প্রতিকূলতা ও বাধা বিপত্তির কারণে এয়ারলাইন্সটির পর্ষদের কার্যক্রম প্রায় স্থবির। ইতোমধ্যে নিজ নিজ পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনকে(বিএসইসি) আবেদন জানিয়েছে পর্ষদের সদস্যরা।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জানান, ইউনাইটেডের কার্যক্রম শুরুর জন্য এয়ার অপারেটিং সার্টিফিকেটটি (এওসি) নবায়ন করতে হবে। এটা বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (বেবিচক) নবায়ন করে। কিন্তু ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা রয়েছে ৩৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল দেনা ৫৫ কোটির মতো, বাকি টাকা সারচার্জ।
এ টাকা পরিশোধ না করলে এওসি ইস্যু করবে না বেবিচক। এ অবস্থায় ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে সারচার্জ মওকুফের অনুরোধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এই চার্জ মওকুফে সম্মতি দেওয়া হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দেয়।
পর্ষদ সদস্যরা আরও জানান, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ পুনরায় চালু করতে গিয়ে তারা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। মিটিংসহ নানা কার্যক্রমের সময় পর্ষদের সদস্যরা নিজ পকেট থেকে টাকা খরচ করেন। এছাড়া মিটিং করার জন্য তাদের বর্তমানে কোনো জায়গা নেই। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সাবেক এমডির উত্তরার একটি ভবনে তারা আগে মিটিং করতেন। গত এক বছর ধরে ওই ভবনেও তাদের মিটিং করতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া বিমানবন্দরে এয়ারওয়েজের যেই অফিসটি আছে সেটাও ঢুকতে দেয়া হয় না পর্ষদ সদস্যদের।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আমরা অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তবে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা দেনা দেখে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এয়ারপোর্টের মধ্যে ইউনাইটেডের অফিস রয়েছে সেখানে আমাদের যেতে দেওয়া হয় না। এমনকি বসে থাকা এয়ারক্রাফটগুলো দেখতে যেতে পারি না। এভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে বেবিচক এবং বিএসইসিকে জানিয়েছি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আসলে আমাদের সব কার্যক্রম চালানো সম্ভব না।
সম্প্রতি বিএসইসিকে দেওয়া ইউনাইটেড পর্ষদের চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা দায়িত্ব গ্রহণকালে কোম্পানির কোনো তহবিল ছিল না। এ কারণে ব্যক্তিগতভাবে মোটা অঙ্কের টাকা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে খরচ করা হয় এবং পরবর্তীতে স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড থেকে ২০ লাখ টাকা ধার গ্রহণ করা হয় যা পরিশোধ করার সামর্থ্য এখন কোম্পানির নেই।
এতে বলা হয়, ‘দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনাদায়ে থাকায় আমরা প্রতিনিয়তই তাদের পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে তাগাদা পাচ্ছি এবং কিছু কিছু সংস্থা-প্রতিষ্ঠান আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আমাদেরকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এদিকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে রক্ষিত এয়ারলাইনের মূল্যবান যন্ত্রাংশগুলো প্রতিনিয়ত চুরি কিংবা খোয়া যাচ্ছে এবং অযত্ন-অবহেলায় উড়োজাহাজগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে খুব শীঘ্রই এগুলো স্ক্র্যাপে পরিণত হবে। তখন আর কারোরই কিছু করার থাকবে না। এ অবস্থায় আমরা মনে করি- সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের যদি এয়ারলাইনটি পুনর্জীবন করার ব্যাপারে কোনরূপ সদিচ্ছাই না থাকে, সেক্ষেত্রে আর সময়ক্ষেপণ না করে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে সত্বর অব্যাহতি নেওয়াই বাঞ্ছনীয় হবে। এ ব্যাপারে আপনার সুচিন্তিত মতামত পেলে আমরা যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’
২০০৭ সালে দেশে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় তারা। বন্ধ হওয়ার সময় ইউনাইটেড বলেছিল, ‘বহরে থাকা ১০টি উড়োজাহাজের সবকটির রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। এছাড়া তাদের ওই সময় এত টাকাও ছিল না।’
দুই সপ্তাহ পর ফিরে আসার আশা ব্যক্ত করলেও পাঁচ বছরেও ফিরতে পারেনি সংস্থাটি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরের জায়গা দখল করে আছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি উড়োজাহাজ। সবমিলিয়ে তাদের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৫৫ কোটি টাকা। কয়েক বছর ধরে পাওনা আদায়ে চিঠি দিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ আদায় করতে পারেনি বেবিচক।
একপর্যায়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে নতুন সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক বসায় বিএসইসি। এই সাতজনের মধ্যে এভিয়েশন ও ভ্রমণ বিষয়ক সাময়িকী ‘বাংলাদেশ মনিটার’ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়।
এ বছরের ৩ জানুয়ারি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে ৭ বছরের (২০১৬-২০২২) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। এজিএমে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের সদস্যরা দেশের প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব এয়ারলাইন্সটিকে অপারেশনে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এজিএমে তারা বলেছিলেন, প্রথম ধাপে কার্গো অপারেশন, পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে (২০২৬) কমার্শিয়াল ফ্লাইট শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
তবে এজিএমের ৮ মাসের মধ্যে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।