মালয়েশিয়া রুটে বিমানের টিকেট সিন্ডিকেট চক্র আবারো বেপোরোয়া
- আপডেট সময় : ০৬:১৯:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ জুন ২০২৩
- / 142
মো. খায়রুল আলম খান:
মালয়েশিয়গামী শ্রমিকদের নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে টিকেট কিনে তারপরই পাঠাতে হচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সীগুলোকে। এরপরও টিকেট সিন্ডিকেট চক্রের কারণে ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটের ওয়ানওয়ের টিকেট পাওয়া দুরুহ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মালয়েশিয়া সরকারের সাথে কুটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গতবছর থেকে এই শ্রমবাজারটি উম্মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারও ৩ ধাপে তাদের পছন্দের ১০০ বাছাই করা রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে দেশটিতে শ্রমিক যাওয়ার কার্যক্রম শুরু করে।
শ্রমবাজার উম্মুক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্য ২ লাখেরও বেশী শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছেন। তবে এরমধ্যে কিছু শ্রমিক যাওয়ার পর কাজ না পাওয়ার কারণে বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও হাইকমিশনের শ্রম উইং থেকে এসব শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে এজেন্সীগুলোর পক্ষ থেকে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার জনশক্তি কর্মসংস্থাণ ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ডেপুটি ডাইরেক্টর (ডিডি) মো. সাজ্জাদ আলম খান প্রবাসী কণ্ঠকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সর্ম্পকে বলেন, এই মুহুর্তে মালয়েশিয়ার বাজার খুব চাঙ্গা। প্রতিদিন দেশটিতে যাচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। তিনি বলেন, আমাদের বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২২ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৬ হাজার কর্মীর নামে বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু হয়েছে। শুধু আজই দেয়া হয়েছে ২২’শ শ্রমিকের বর্হিগমন ক্লিয়ারেন্স। প্রতিদিন বাড়ছে এই সংখ্যা।
বিএমইটিতে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সীর একাধিক মালিক মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমানের টিকেট সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতার কারণে তাদের অনেক কর্মীর ফ্লাইট দিতে বিলম্ব হচ্ছে। এরফলে ঢাকায় চলে আসা অনেক কলিং ভিসা নিয়ে তারা বিপদের মধ্যে রয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটের বিমান টিকেট যেখানে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় পাওয়া যেতো সেখানে এখন এই রুটের ওয়ানওয়ে টিকেট কিনতেই ৬৫ হাজার টাকার বেশী লাগছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, যারা বিমানের টিকেট সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত তারা এয়ারলাইন্সগুলোর কতিপয় ব্যক্তির সাথে আতাত করে টিকেট আগেভাগে কিনে ব্লক করে রাখছে। এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এরপর তারা ওই টিকেট চড়া দামে এজেন্সীগুলোর কাছে বিক্রি করছে। এতে এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে সম্পৃত্ত কতিপয় কর্মকর্তা প্রতি টিকেটে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকার সুবিধা পাচ্ছে। অপরদিকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতি টিকেটের বিপরীতে ৩০ হাজার টাকার বেশী ইনকাম করছে। এরা কারা তা এজেন্সীর মালিকরা জানলেও ব্যবসার কারণে তারা মুখ খুলতে পারেন না। যার কারণে মালিকরা এখন বেশী টাকা খরচ করেই শ্রমিকদের পাঠাচ্ছে। বিশেষ করে যথা সময়ে টিকেট না পাওয়ার কারণে কলিং ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তারা। এরসাথে ভোগান্তিও রয়েছেই। তারা সরকারের সংশ্লিষ্টদের বারবার বলার পরও বিমানের টিকেট সিন্ডিকেট চক্রের কোন হোতা বা সহযোগিদের অদ্যাবধি আটক করা তো দুরের কথা, তাদের শনাক্তও করতে পারছে না। যার ফলে মালয়েশিয়া রুটে সিন্ডিকেট চক্রের উৎপাতে একজন শ্রমিক ৪-৫ লাখ টাকার কমে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। যদি সিন্ডিকেট চক্রের বেপোরোপা কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হতো তাহলে মালয়েশিয়াতে কম টাকায় (২ থেকে ৩ লাখ টাকা) লোক পাঠানো যেতো।
এদিকে কম দামে টিকেট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে জনশক্তি ও ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কৌশলে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে রামপুরা এলাকার একটি প্রতিষ্ঠান। এরফলে অনেক শ্রমিকের টাকা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আটকে গেছে। এখন এসব শ্রমিকদের কিভাবে নতুন করে টিকেট করে শ্রমিকদের পাঠানো হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন রিক্রুটিং এজেন্সীর মালিকরা।