দুবাইগামী ভিজিট ভিসার যাত্রীদের নজরদারীর পরামর্শ ব্যবসায়ীদের
- আপডেট সময় : ০১:৫৩:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩
- / 143
প্রবাসী কণ্ঠ প্রতিবেদক:
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের যাওয়ার অনুমতি মিললেও এখনো দেশটির আইনশৃংখলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরেনি বলে মনে করছেন অভিবাসন ব্যবসায়ী ও এই পেশার সাথে সম্পৃত্ত বিশ্লেষকরা।
তবে পরিস্থিতি যাতে দ্রুত অনুকুলে চলে আসে এরজন্য লিবিয়ার স্পেশাল ফোর্সসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত মানবপাচারকারী, তেল পাচারকারী, অপহরনকারীসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে শুরু করেছে সাড়াশি অভিযান।
সর্বশেষ শুক্রবার (২৬ মে) রাতে লিবিয়ার ত্রিপোলী থেকে ৭৫ কিলোমিটার দুরত্বের সাগরপাড়ে সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে লিবিয়ান স্পেশাল ফোর্স সদস্যরা ড্রোন দিয়ে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে তাদের উপর বোমা হামলা চালায়। তবে এই হামলায় কতজন হতাহত হয়েছে এবং এই হতাহতের ঘটনায় কোন বাংলাদেশী রয়েছে কি-না তা শনিবার (২৭ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত দুতাবাস থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে লিবিয়ার ত্রিপোলীর স্থানীয় বাংলাদেশীদের মাধ্যমে পাওয়া (ফেসবুক) প্রাথমিক তথ্য জানা গেছে, ড্রোন দিয়ে বোমা হামলার ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছে।
‘ভয়েজ অব বাংলাদেশ ইন লিবিয়া” নামক এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা গেছে, “জাওয়াইয়া সিটিতে সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন আস্তানা লক্ষ্য করে কয়েক দফা ড্রোন হামলা চালিয়েছে লিবিয়ান আর্মী। চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে অনেকে”।
এই প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে লিবিয়ার ত্রিপোলীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স গাজী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান কবীর এর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করার পরও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ত্রিপোলী থেকে জনৈক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে লিবিয়ার বৈধ শ্রমবাজার এবং ঢাকা থেকে দুবাই, মিশর হয়ে কিভাবে লিবিয়ার বেনগাজি-ইউরোপে লোকজন যাচ্ছে সে বিষয়ে বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকেই লিবিয়াতে বৈধভাবে বাংলাদেশী কর্মী আসা বন্ধ। ২০২২ সালে শ’দুয়েক বাংলাদেশী আগের এমওইউ চুক্তি অনুযায়ী এসেছিলো। এরপর থেকে আর কোন শ্রমিক আসেনি। গত ঈদের আগে আমাদের মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের লিবিয়ায় আসার কথা ছিলো। কিন্তু আসেননি। ইতিমধ্যে ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সী আজুর বেঙ্গল লিমিটেডসহ ৩টি রিক্রুটিং এজেন্সী নতুন করে লিবিয়াতে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একই সাথে তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডাক্তার নার্স আসার বিষয়ে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে বলে শুনেছি। তাদের আসার বিষয়ে আমাদের এখানে ত্রিপোলীর বাংলাদেশ দুতাবাস ইতিমধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট দিয়েছে। এখন কবে থেকে এসব বৈধ লোক আসতে পারবে তা আমাদের বাংলাদেশ দুতাবাস প্রধান আর দেশে আমাদের মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন।
তবে বৈধভাবে এই শ্রমবাজারটি পুরোদমে উম্মুক্তের আগেই প্রতিদিন ঢাকা থেকে ভিজিট ভিসা নিয়ে অনেক লোক লিবিয়াতে আসছে। মানবপাচারকারী চক্রটি রুট হিসাবে ব্যবহার করছে ঢাকা থেকে দুবাই, এরপর মিশর। সেখান থেকে পরিস্থিতি বুঝে ফ্লাইটে লিবিয়ার বেনগাজি নিয়ে আসছে। এরপর সুযোগ মতো তাদের সাগরপথে ইউরোপের দেশ ইতালীতে পাঠাতে মানবপাচারকারী চক্র সক্রিয় ভ’মিকা রাখছে।
তিনি আরো বলেন, চক্রটি বৈধভাবে শ্রমবাজার খুলছে- জানতে পেরে এখন কম টাকার লোভ দেখিয়ে (২ লাখ ৭০-৮০ হাজার টাকা) লিবিয়াতে লোক নিয়ে আসছে। তারা লিবিয়াগামীদের বোঝাচ্ছে, বৈধভাবে যেতে ৩-৬ মাস সময় লাগবে। আর অবৈধভাবে গেলে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লিবিয়াায় আসা যাবে। মানবপাচারকারীরা এভাবেই লিবিয়ায় আসা লোকগুলো এবং আতœীয়স্বজনদের টোপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার পর নিরাপত্তার বিষয়টি কেমন হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশটির সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি অনুকুলে আসেনি। তবে বেনগাজি ছাড়া পুরো লিবিয়ার আইন শৃংখলা মোটামুটি ত্রিপোলীর কন্ট্রোলে রয়েছে। তিনি বলেন, মানবপাচারকারী এবং সাগরপথে তেলপাচারকারী ও কিডন্যাপারদের বিরুদ্ধে লিবিয়ান আর্মির স্পেশাল ফোর্স আবদোরোপ কারা (রাদা) ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে। গত শুক্রবারও ত্রিপোলী থেকে ৭৫ কিলোমিটার দুরের জাওয়াইয়া (সাগরপাড়) এলাকায় ড্রোন দিয়ে দুর্বৃত্তদের উপর বোমা হামলা চালিয়েছে। এই খবরটি এখানকার সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তবে এঘটনায় কি পরিমান লোক হতাহত হয়েছে তা সংবাদে প্রকাশ করা হয়নি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ওই বাংলাদেশী ব্যবসায়ী বলেন, বাংলাদেশী শরীফ নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কিডন্যাপিং এবং মানবপাচার চক্র নিয়ন্ত্রন করছে। এটা দুতাবাসও জানে। এখানে কোন কিডন্যাপিংয়ের ঘটনা ঘটলেই প্রথমেই ওই শরীফের শরনাপন্ন হতে হচ্ছে। তার বাহিনী ঢাকার মাদারীপুর, কুমিল্লা থেকে শুরু করে, ঢাকা, দুবাই, মিশর, বেনগাজি, জাওয়াইয়্যা হয়ে ইতালী পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। তার বাড়ি হয় মাদারীপুর নতুবা কুমিল্লা বলে শুনেছি। আমাদের জানা মতে, তার দলের অনেক সদস্য জেলে রয়েছে, অনেকে আবার সাগরপথে ইউরোপে চলে গেছে। এই মানবপাচারকারী চক্রগুলোর কারণে এদেশে অপরাধ বাড়ছে। এখন লিবিয়ান স্পেশাল ফোর্স তাদের ধরতে সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে। এরই অংশ হিসাবে শুক্রবার রাতে ড্রোন দিয়ে দুবৃত্তদের উপর বোমা হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে।
ভিজিট ভিসায় অবৈধপথে দুবাই হয়ে লিবিয়া এবং সাগরপথে ইউরোপ যাওয়া বন্ধের বিষয়ে পরামর্শ কি- জানতে চাইলে ওই অভিবাসন ব্যবসায়ী এবং শ্রম বিশ্লেষক বলেন, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বর্তমানে বৈধভাবে লিবিয়ার শ্রমবাজার খুলতে হলে আগে অবশ্যই অবৈধপথে ঢাকা থেকে দুবাই আসা ভিজিট ভিসাধারী যাত্রীদের উপর ব্যাপক নজরদারী বাড়াতে হবে। একই সাথে তাদের পরিচয়, ব্যাংক ব্যালান্স ও সাথে থাকা ডলারসহ বিস্তারিত নিশ্চিত হয়েই তারপর বিমানবন্দর থেকে যাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দিতে হবে। তাহলেই অবৈধপথে লোক যাওয়ার হার কমে আসবে। তিনি বলেন, এটা আমার মতামত। তিনি উদাহরন দিয়ে বলেন, আমার এক আতœীয় নোয়াখালীর সাইফুল ইসলাম বৈধপথে লিবিয়ায় আসার প্রস্তুতি নেয়ার মধ্যে হঠাৎ শুনলাম, শুক্রবার (২৬ মে) সে ভিজিট ভিসায় দুবাই চলে এসেছে। সেখান থেকে দালাল তাকে এখন মিশরে নিয়ে গেছে। তার সাথে আরো অন্তত ৪০ জন লোক অবস্থান করছে। তাদের সবাইকে সুযোগ বুঝে লিবিয়ার বেনগাজিতে পাঠানো হবে। এসব অবৈধ লোক প্রবেশের ক্ষেত্রে বেনগাজির প্রশাসন কন্ট্রোল করছে বেনগাজির জেনারেল হাফতার এর ছেলে সাদ্দাম। তাকে নাকি প্রতি লোকের জন্য কমিশন দিতে হয়। যত লোক ঢুকবে তত লোকের বিপরীতে তাকে কমিশন দিতে হবে। এটা লিবিয়া সরকার নির্মূলের চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না।
প্রকাশ: ২৮ মে, ২০২৩ রোববার ২ টা