চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই রহস্য উদঘাটন র্যাবের
- আপডেট সময় : ০২:৫১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩
- / 294
২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০০ পিএম
পরদিন শাহাদাতের ফোন থেকে একটি কল আসে। পরিবারকে জানানো হয়, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভার ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ পড়ে আছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মরদেহ শনাক্ত করে পরিবার।
এ ঘটনায় ২৪ এপ্রিল নিহতের ভাই শহিদুল ইসলাম জসিম (৪০) বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নম্বর-২৮) দায়ের করেন। পরে হত্যায় জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীসহ ছিনতাইকারী চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের দাবি, সিরাজদিখান এলাকায় শাহাদাতকে ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তার ইজিবাইক ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র্যাব ১০-এর অধিনায়ক পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, স্ত্রী ও দুই সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর কদমতলীর মদিনাবাগ এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকে শাহাদাতের পরিবার। তিনি দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভাড়া নিয়ে ইজিবাইক চালাতেন। গত ২৩ এপ্রিল যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে শাহাদাতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। ফলে বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে পরিবার। পরদিন এক অজ্ঞাত ব্যক্তি কল করে তাদের জানালে মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং থানায় মামলা হয়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় র্যাব-১০ এর একটি দল দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মো. জুয়েল বেপারী (২৭) এবং হত্যায় সরাসরি জড়িত মো. সাজ্জাদ শেখ (২৩), মো. ইসমাইল হোসেন (২৩), মো. লিমন মাতুব্বর (২১), মো. সোহাগ (২০) ও রোমান শিকদারসহ (১৮) সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা শাহাদাতকে হত্যা করার পর ইজিবাইকটি মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকার মো. জাকির হোসেনের কাছে বিক্রি করে দেয়।
তাদের দেওয়া তথ্যমতে, র্যাব-১০-এর একটি দল শনিবার (২৯ এপ্রিল) ভোরে সিরাজদিখান এলাকা থেকে মো. জাকিরকে (৪০) গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে তার গ্যারেজ থেকে ছিনতাইকৃত ইজিবাইকসহ মোট ৬টি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।
যেভাবে চালক শাহাদাতকে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল ঈদের দিন জুয়েল, সাজ্জাদ, লিমন, রোমান, ইসমাইল ও সোহাগ মিলে মাওয়া ঘুরতে যাওয়ার জন্য ঘণ্টায় ৩২০ টাকা হিসেবে শাহাদাতের ইজিবাইকটি ভাড়া নেয়। এ সময় তারা ইজিবাইকটি পরদিন ছিনতাই করবে বলে পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী, ঈদের দিন তারা শাহাদতকে ১৯০০ টাকা ভাড়া দেয় এবং পরদিন তারা আবারও ঘুরতে যাবে বলে জুয়েল তার কাছ থেকে মোবাইল নম্বর চেয়ে নেয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন ২৩ এপ্রিল তারা শাহাদাতকে কল করে কদমতলীর লাবনী রেস্টুরেন্টের সামনে ডেকে আনে।
সেখান থেকে জুয়েল, সাজ্জাদ ও লিমন ইজিবাইকে ওঠে। এরপর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার কালীগঞ্জের খালপাড় থেকে ওঠে ইসমাইল। তারা মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। ফেরার পথে রাত ১১টার দিকে সিরাজদিখান থানার কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভার ব্রিজে ওঠার পর তারা ইজিবাইক থামিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। এক পর্যায়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা চালক শাহাদাতের মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকে।
এসময় শাহাদাত চিৎকার করলে জুয়েল তার মুখ চেপে ধরে। টানা মারধরের পর অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা তাকে ব্রিজের ওপর থেকে নিচে ফেলে দেয়। এরপর ইজিবাইকটি নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
র্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানাযন, তিনি ওই চক্রের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় ইজিবাইকটি কেনেন। এ চক্রটির কাছ থেকে তিনি বিভিন্ন সময়ে চোরাই বা ছিনতাই করা ইজিবাইক-অটো রিকশা কম দামে কিনে সেগুলোর রং-কাঠামো পরিবর্তন করে বিক্রি করতেন। গ্রেপ্তার হওয়া জুয়েল, লিমন ও ইসমাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, এসব ঘটনার অনেকগুলোর ক্ষেত্রে থানায় রিপোর্ট করা হয় না। সময়মতো ভুক্তভোগীরা থানায় রিপোর্ট করলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
সুত্র ঢাকাপোষ্ট.কম