চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার: বন্দীর খাবার যাচাইয়ের পরই পরিবেশন
- আপডেট সময় : ০১:৩৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
- / 345
প্রবাসী কণ্ঠ প্রতিবেদক,
প্রকাশ সময় : ৩১ ডিসেম্বর, রাত ৭টা ৩৮ মিনিট
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক বন্দীদের জন্য প্রতিদিন যে খাবারগুলো তৈরী করা হচ্ছে সেগুলো মান সম্মত হচ্ছে কি-না তা যাচাই করার পরই পরিবেশন করা হচ্ছে।
শুধু খাবার নয়, বন্দীর সাথে সাক্ষাত থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই এখন চলছে কঠোর মনিটরিং। যারফলে কারাগারে আগের তুলনায় ফিরেছে শৃংখলা।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এমরান হোসেন প্রবাসী কণ্ঠকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, বর্তমানে ২২৪৯ জন ধারণ ক্ষমতার কারাগারে ৫ হাজারের মতো বন্দী আছে।
কারাগারে খোজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তা থেকে কিছুটা উচুতে অবস্থান করা ১৪.৪০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। গত সপ্তাহ পর্যন্ত (২৭ ডিসেম্বর) এই কারাগারে পুরুষ ২১১৪ জন ও মহিলা ১৩৫ জন মিলিয়ে মোট ২২৪৯ জন বন্দী আটক ছিলেন। এসব বন্দীদের দেখভাল ও সার্বিক তত্ববধানের জন্য সিনিয়র জেল সুপার, জেলার, প্যাথলজিষ্ট, সহকারী সার্জন, ডেপুুটি জেলার, ডিপ্লোমা নার্স, সর্বপ্রধান কারারক্ষী, মেট্রোন, মহিলা কারারক্ষী, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিষ্ট, ড্রাইভার, বাবুর্চি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী মিলিয়ে ৪৬০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী কারাগার সামলানোর দায়িত্ব পালন করছেন। ১৮৮৫ সালে স্থাপিত কারাগারটি ১৯৯৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করা হয়।
সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, বন্দীর সাথে সাক্ষাতে আসা স্বজনসহ অন্যান্যদের কারাগারের প্রধান গেটে কর্তব্যরত কারারক্ষীরা তল্লাশী করে ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন। মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না বলে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আগেই নির্দ্দেশনা রয়েছে। কারাগারের ভেতরের বেশীরভাগ অংশে এবং বাইরের চারপাশে সিসিটিভি দিয়ে গতিবিধি মনিটরিং করা হচ্ছে। রির্জাভ গার্ডের সামনে আগত কতর্ব্যরত প্রধান কারারক্ষীর কাছ থেকে বন্দীর সাথে সাক্ষাত করতে আসা স্বজনরা স্লিপ নিয়ে পাশের সাক্ষাত কক্ষে নিদ্দিষ্ট সময় অনুযায়ী দেখা সাক্ষাত করানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন কারারক্ষী নাম না প্রকাশের শর্তে প্রবাসী কণ্ঠকে কারাগারের সার্বিক পরিস্থিতি সর্ম্পকে শুধু বলেন, আগের চট্টগ্রাম কারাগার আর এখনকার কারাগারের চিত্রের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা যা ইচ্ছা তা করতে পারলেও এখনকার পরিস্থিতি সর্ম্পর্ণ ভিন্ন। কারা প্রশাসন খুবই কঠোর ও সর্তক। কোথাও সামান্য ধরনের অনিয়ম পেলেই সাথে সাথে সিসিটিভিতে শনাক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। তাই আগতদের উপর আমাদের নজরদারী সার্বক্ষনিক রাখতে হয়। প্রতিটা কাজেই আমাদেরকে সর্তকভাবে ডিউটি করছি। তিনি বলেন, শুনছি কারাগারে বদলী সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা হতে যাচ্ছে। প্রধান কারারক্ষীদের বদলী যেমন সারাদেশে হয়, তেমনি কারারক্ষীসহ অন্যান্যদেও বদলীও ডিভিশনাল আর থাকছে না। যে কোন সময় যে কোন কারাগারে বদলী করা যাবে।
চট্টগ্রাম জেলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এমরান কারাগারের দায়িত্ব গ্রহনের ১০ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। এই সময়ের দায়িত্ব পালন সর্ম্পকে তিনি প্রবাসী কণ্ঠকে বলেন, খুব সুন্দরভাবে চট্টগ্রাম কারাগার পরিচালনা করতে পারছি। চেইন অব কমান্ড মেনে সবাই দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ জেলার হিসাবে নোয়াখালী কারাগার থেকে এখানে এসে দায়িত্ব নিয়েছি। জেলার হিসাবে ১১ বছর চলছে আমার। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করার কারণে কর্তৃপক্ষ আমাকে এই কারাগারে আবারো দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। আমিও চেষ্টা করছি নিয়মের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে।
কারাগারের সার্বিক অবস্থা এবং খাবার সর্ম্প কিত প্রশ্নের উত্তরে জেলার এমরান প্রবাসী কণ্ঠকে বলেন, আমাদের বর্তমান আইজি প্রিজন্স স্যার প্রতিটি মুহুর্ত কোথাও কোন সমস্যা, অনিয়ম হচ্ছে কি-না সেটি কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন। আমরা তার দেয়া নির্দেশনা প্রতিদিন পালন করছি ।
বন্দীদের খাবারের মান কেমন এ সর্ম্পকিত এক প্রশ্নের জবাবে জেলার এমরান বলেন, ডিআইজি প্রিজন্স এবং সিনিয়র জেল সুপার স্যারের নির্দ্দেশেনা মোতাবেক আমি ফজরের নামাজ আদায় করেই কারাগারে চলে আসি। আমার প্রথম কাজই হচ্ছে যেখানে (বন্দী) খাবার তৈরী করা হচ্ছে সেখানে যাওয়া। এরপর তৈরী হওয়া খাবারগুলো ঠিকঠাক মতো হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া। এরপর পরিবেশন করার জন্য সংম্লিষ্টদের নির্দেশ দেই। এছোড়া কারাক্যান্টিন, বন্দীদের খোজ নিয়ে কেইস টেবিলে গিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করি। এটাই আমার প্রতিদিনের রুটিং ওয়ার্ক । যার কারণে এই কারাগারের দায়িত্ব গ্রহনের ১১ মাসের মধ্য এখন পর্যন্ত কোন ধরনের আমার সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, আমার মুল উদ্দেশ্যই হচ্ছে কারাবন্দীদের সেবা করা।