মালয়েশিয়ায় দাতো আমিনের বেস্টিনেটে এন্টি করাপশন দল

  • আপডেট সময় : ০৭:৪০:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই ২০২২
  • / 221
প্রবাসী কণ্ঠ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বিশেষ প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরনে ‘সিন্ডিকেটের গঠনের হোতা’ হিসাবে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত দাতো শ্রী আমিন নুরের কুয়ালালামপুরের বেস্টিনেট কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দেশটির এন্টি করাপশন বিভাগ। পরে সংস্থার কর্মকর্তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনের দায়িত্বরত লেবার কাউন্সেলরকে (মিনিষ্টার) এবিষয়ে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার অনলাইন এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে। মালয়েশিয়ার এন্টি করাপশন প্রতিষ্ঠানকে দেশটিতে এসপিআরএম বলা হয়।

এরআগে কলিং ভিসায় কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য যে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে সেই পদ্ধতিতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে বলে মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা ও এনজিও সংস্থা অভিযোগ করে। এরমধ্যে এখলাস নামের একটি এনজিও সংস্থা কয়েকদিন আগে ২৫ সিন্ডিকেট গঠনের দুর্নীতির সাথে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তারপরই দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক বা (এসপিআরএম) বুধবার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট প্রথার হোতা ও বেস্টিনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দাতো শ্রী আমিন নুর এবং মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর মিনিষ্টারকে (শ্রম) দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কথিত সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে দাতো সেরি-এর নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেট কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে এসপিআরএম (দুদক)। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বেস্টিনেট-এর প্রধান হচ্ছেন দাতো আমিন।

যিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বর্তমান মালয়েশিয়ার একজন প্রভাবশালী নাগরিক। তাকেসহ কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (লেবার) জনাব নাজমূস সাদাত সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান তান সেরী আজম বাকি।

তিনি এ প্রসঙ্গে, আমরা এই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করবো এবং আমাদের তদন্তের অংশ হিসেবে আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। বেস্টিনেট হচ্ছে সরকারকে ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ঋডঈগঝ) প্রদান ও পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আধা সরকারি সংস্থা। এই সংস্থাটির দায়িত্বে রয়েছেন দাতো আমিন।
অপরদিকে মালয়েশিয়ার দ্য ভাইবস নামের একটি পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) নাজমূস সাদাত সেলিম তদন্ত দলের কাছে বলেছেন, ২৫ এজেন্সি এবং ২৫০ সাব এজেন্সি নির্বাচনে বাংলাদেশ সরকারের কোন ভূমিকা নেই। কারণ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বৈধ ১৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সরবরাহ করা হয়েছিল স্বাধীনভাবে শ্রমিক প্রেরনের ব্যবস্থায় অনুমোদন করার জন্য। কিন্তু এ বিষয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এই ২৫ এজেন্সি নির্বাচনের বিষয়টি বাতিল করেছিলেন। কারণ দু’দেশের স্বাক্ষরিত এমওইউ চুক্তিতে এই বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত ছিলো না।

দাতো আমিন ও  তার অফিসের ৩ স্টাফকে এন্টি করাপশন কর্মকর্তারা আটক করে নিয়ে যাওয়া এবং ২৫ অনিয়মের বিষয়ে কুয়ালালামপুর হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রসঙ্গে ঢাকার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাম না জানিয়ে প্রবাসী কণ্ঠকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের কেউ জানে না, আমাদের সরকার জানে না। কোথা থেকে এ তালিকা এলো সেবিষয়সহ ৩ কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দেশটির এন্টি করাপশন আমিনকে তার অফিস থেকে নিয়ে গেছেন। এসময় তার অফিস থেকে সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্ট বেশকিছু ডকুমেন্টও তারা নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেও ধুরন্ধর আমিনকে মালয়েশিয়ার এন্টি করাপশন নিয়ে গিয়েছিলো। তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। এরপর সংস্থাটি অনুসন্ধান চালানোর পর বুধবার তার অফিসে আবারো অভিযান চালায়।

তিনি বলেন, এই দুষ্টু ব্যক্তির কারণে আজ মালয়েশিয়ার সম্ভবনাময় শ্রমবাজারে ব্যাপক অরাজকতা চলছে। তিনি যদি এই সিন্ডিকেট প্রথা চালু না করতেন, তাহলে বাংলাদেশ থেকে কম টাকায় লাখ লাখ শ্রমিক দেশটিতে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স পাঠাতে পারতো। শুধুমাত্র দাতো আমিন এবং তার এদেশীয় পার্টনার রুহুল আমিন স্বপনের কারণে শ্রমবাজারটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আমাদের সরকার এখনো কর্মীদের মেডিকেল করানোর অনুমতি দেয়নি। তারপরও এরা কোন ক্ষমতাবলে গোপনে মেডিকেল করানোর সাহস পাচ্ছে ? সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

শ্রম কাউন্সেলরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ার এর সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি টেলিফোন ধরেননি। জানা গেছে রাষ্ট্রদূত ছুটিতে রয়েছেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

মালয়েশিয়ায় দাতো আমিনের বেস্টিনেটে এন্টি করাপশন দল

আপডেট সময় : ০৭:৪০:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই ২০২২

 

বিশেষ প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরনে ‘সিন্ডিকেটের গঠনের হোতা’ হিসাবে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত দাতো শ্রী আমিন নুরের কুয়ালালামপুরের বেস্টিনেট কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দেশটির এন্টি করাপশন বিভাগ। পরে সংস্থার কর্মকর্তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনের দায়িত্বরত লেবার কাউন্সেলরকে (মিনিষ্টার) এবিষয়ে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার অনলাইন এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে। মালয়েশিয়ার এন্টি করাপশন প্রতিষ্ঠানকে দেশটিতে এসপিআরএম বলা হয়।

এরআগে কলিং ভিসায় কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য যে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে সেই পদ্ধতিতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে বলে মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা ও এনজিও সংস্থা অভিযোগ করে। এরমধ্যে এখলাস নামের একটি এনজিও সংস্থা কয়েকদিন আগে ২৫ সিন্ডিকেট গঠনের দুর্নীতির সাথে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তারপরই দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক বা (এসপিআরএম) বুধবার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট প্রথার হোতা ও বেস্টিনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দাতো শ্রী আমিন নুর এবং মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর মিনিষ্টারকে (শ্রম) দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কথিত সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে দাতো সেরি-এর নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেট কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে এসপিআরএম (দুদক)। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বেস্টিনেট-এর প্রধান হচ্ছেন দাতো আমিন।

যিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বর্তমান মালয়েশিয়ার একজন প্রভাবশালী নাগরিক। তাকেসহ কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (লেবার) জনাব নাজমূস সাদাত সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান তান সেরী আজম বাকি।

তিনি এ প্রসঙ্গে, আমরা এই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করবো এবং আমাদের তদন্তের অংশ হিসেবে আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। বেস্টিনেট হচ্ছে সরকারকে ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ঋডঈগঝ) প্রদান ও পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আধা সরকারি সংস্থা। এই সংস্থাটির দায়িত্বে রয়েছেন দাতো আমিন।
অপরদিকে মালয়েশিয়ার দ্য ভাইবস নামের একটি পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) নাজমূস সাদাত সেলিম তদন্ত দলের কাছে বলেছেন, ২৫ এজেন্সি এবং ২৫০ সাব এজেন্সি নির্বাচনে বাংলাদেশ সরকারের কোন ভূমিকা নেই। কারণ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বৈধ ১৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সরবরাহ করা হয়েছিল স্বাধীনভাবে শ্রমিক প্রেরনের ব্যবস্থায় অনুমোদন করার জন্য। কিন্তু এ বিষয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এই ২৫ এজেন্সি নির্বাচনের বিষয়টি বাতিল করেছিলেন। কারণ দু’দেশের স্বাক্ষরিত এমওইউ চুক্তিতে এই বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত ছিলো না।

দাতো আমিন ও  তার অফিসের ৩ স্টাফকে এন্টি করাপশন কর্মকর্তারা আটক করে নিয়ে যাওয়া এবং ২৫ অনিয়মের বিষয়ে কুয়ালালামপুর হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রসঙ্গে ঢাকার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাম না জানিয়ে প্রবাসী কণ্ঠকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের কেউ জানে না, আমাদের সরকার জানে না। কোথা থেকে এ তালিকা এলো সেবিষয়সহ ৩ কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দেশটির এন্টি করাপশন আমিনকে তার অফিস থেকে নিয়ে গেছেন। এসময় তার অফিস থেকে সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্ট বেশকিছু ডকুমেন্টও তারা নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেও ধুরন্ধর আমিনকে মালয়েশিয়ার এন্টি করাপশন নিয়ে গিয়েছিলো। তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। এরপর সংস্থাটি অনুসন্ধান চালানোর পর বুধবার তার অফিসে আবারো অভিযান চালায়।

তিনি বলেন, এই দুষ্টু ব্যক্তির কারণে আজ মালয়েশিয়ার সম্ভবনাময় শ্রমবাজারে ব্যাপক অরাজকতা চলছে। তিনি যদি এই সিন্ডিকেট প্রথা চালু না করতেন, তাহলে বাংলাদেশ থেকে কম টাকায় লাখ লাখ শ্রমিক দেশটিতে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স পাঠাতে পারতো। শুধুমাত্র দাতো আমিন এবং তার এদেশীয় পার্টনার রুহুল আমিন স্বপনের কারণে শ্রমবাজারটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আমাদের সরকার এখনো কর্মীদের মেডিকেল করানোর অনুমতি দেয়নি। তারপরও এরা কোন ক্ষমতাবলে গোপনে মেডিকেল করানোর সাহস পাচ্ছে ? সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

শ্রম কাউন্সেলরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ার এর সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি টেলিফোন ধরেননি। জানা গেছে রাষ্ট্রদূত ছুটিতে রয়েছেন।