টরন্টো ফ্লাইটের জন্য ম্যানচেস্টারে ‘স্টপওভার’ অনুমোদন দিয়েছে বিমান
- আপডেট সময় : ০৬:২১:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২
- / 211
সাধারণত টানা ১৬ ঘণ্টার বিমান যাত্রায় পর্যাপ্ত জ্বালানি বহনের জন্য ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যাত্রী বহন করতে হয়। যা বিমানের বাণিজ্যিক খাতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ গত কয়েক মাস ঢাকা থেকে টরন্টো পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার পর অবশেষে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তাই, টানা ১৬ ঘণ্টার ফ্লাইটের বদলে ম্যানচেস্টারে একটি “স্টপওভার”-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি।
যদিও এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বেশকিছু সরকারি কর্মকর্তা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিনামূল্যে একটি “টেস্ট ফ্লাইটে” টরন্টো ভ্রমণ করেছেন।
ম্যানচেস্টারই কেন?
নতুন স্টপওভার প্ল্যান অনুযায়ী, ম্যানচেস্টারে প্রযুক্তিগত অবতরণের জন্য প্রতি রাউন্ড ট্রিপে ৫.৫ কোটি টাকা খরচ হবে। তাই, দেশের বিমান চালনা বিশেষজ্ঞরা এই রুটের পরিবর্তে কোনো এশিয়ান দেশে বিমান থামানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, সেগুলো ম্যানচেস্টার রুটের তুলনায় সস্তা।
এদিকে, ঢাকা-টরন্টো রুটে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিমানের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) ক্যাপ্টেন এবিএম ইসমাইলের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।
কমিটির মতে, ম্যানচেস্টারকে স্টপওভারের জন্য বেছে নেওয়ার কারণ এটি ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে একটি সমৃদ্ধ শিল্প ও ঐতিহ্যের প্রধান শহর এবং ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসীর আবাসস্থল।
ম্যানচেস্টার নিউ ইয়র্কের ফ্লাইটের জন্য সংযোগ বিন্দু হিসেবেও দ্বিগুণ যাত্রী পেতে পারে। এতে বিমান বাংলাদেশ আরও সুবিধা পাবে কারণ এর আগেও তারা ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
কমিটি ম্যানচেস্টারের অনুকূল আবহাওয়া এবং সকাল-বিকেলে ফ্লাইট স্লট পাওয়ার সম্ভাব্যতার বিষয়েও সুপারিশ করেছে।
বিমান বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “অপারেশনাল ঝুঁকি এবং অন্যান্য স্টপে বীমা গ্যারান্টি না থাকার কারণে আমাদের স্টপওভারের জন্য ম্যানচেস্টারকে বেছে নিতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিমান বাংলাদেশ পঞ্চম স্বাধীনতার অনুমোদন নিয়ে ট্রান্সপোর্ট কানাডা সিভিল এভিয়েশন (টিসিসিএ)-এর সঙ্গে আলোচনা করছে। বিমান ভ্রমণে, পঞ্চম স্বাধীনতা বলতে সাধারণত বোঝায় একজন যাত্রীর শেষ গন্তব্যে যেতে বাধ্য না করে একটি রুটে দুই দেশের মধ্যে ভ্রমণ করার অধিকার। উদাহরণস্বরূপ, এটি যাত্রীদের টরন্টোতে ভ্রমণ করতে বাধ্য না করে ঢাকা এবং ম্যানচেস্টারের মধ্যে ভ্রমণ করার অনুমতি দেবে।
যদি টিসিসিএ বিমানের জন্য পঞ্চম স্বাধীনতা সুবিধা অনুমোদন করে, তাহলে এয়ারলাইনটি সম্ভাব্যভাবে ইংল্যান্ডে সরাসরি ফ্লাইট নেই এমন অন্যান্য দেশের যাত্রীদেরও ম্যানচেস্টারে পৌঁছে দিতে পারবে, যা রুটটিকে বাণিজ্যিকভাবে আরও কার্যকর করে তুলবে।
এয়ারলাইনটি তার বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারগুলোর একটি ব্যবহার করে সপ্তাহে কমপক্ষে দেড় হাজার এবং প্রতি মাসে ৬ হাজার যাত্রী বহন করার লক্ষ্যমাত্রা রাখছে। ড্রিমলাইনারে বিজনেস ক্লাসে ৩০টি, প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসে ২১টি এবং ইকোনমি ক্লাসে ২৪৭টি সহ মোট ২৯৮টি আসন রয়েছে।
যাত্রীসেবা উন্নত করতে হবে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হলে বিমান বাংলাদেশ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, “বিমান এই রুটে দৈনিক ফ্লাইটের জন্য পর্যাপ্ত যাত্রী পেতে হিমশিম খাবে। কারণ আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের তুলনায় তাদের পরিষেবা এখনও নিম্নমানের।”
“বিমানকে তাদের অনবোর্ড যাত্রীসেবা উন্নত করতে হবে, যার মধ্যে ইউরোপীয় যাত্রীদের পরিচালনার জন্য সু-প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগও অন্তর্ভুক্ত। বিমান কর্মীদের দক্ষতার সঙ্গে এবং সঠিকভাবে পরিষেবা দেওয়ার জন্য যাত্রীদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক দূরত্ব দূর করতে সক্ষম হতে হবে,” তিনি বলেন।
বিমান বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “সবকিছুই নির্ভর করছে বিমানের ব্যবস্থাপনা ও বিপণন নীতির ওপর। রুটটিকে কার্যকর করতে তাদের এটা দরকার।”
বিমানের স্বল্পতার কারণে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা-ম্যানচেস্টার রুট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় বিমান। এয়ারলাইন্সগুলো ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট পুনরায় শুরু করে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে একই বছরের মার্চ মাসে ফ্লাইটটু আবার স্থগিত করা হয়। পরে, ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ম্যানচেস্টারের ফ্লাইট আবারও চালু করা হয়।