পদত্যাগ করবেন না শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট
- আপডেট সময় : ০৮:০২:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
- / 201
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভয়াবহ সংকট ও খাদ্য-ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল শ্রীলঙ্কায় দিন দিন তীব্র হচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলন। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে জানিয়েছেন, পদত্যাগ করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত তার নেই।
গোতাবায়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের চিফ হুইপ জনস্টোন ফার্নান্দো বুধবার পার্লামেন্টের আইন প্রণেতাদের এ তথ্য জানিয়েছেন। ফার্নান্দো বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি একটি দায়িত্বশীল সরকারের প্রধান নির্বাহী এবং কোনো পরিস্থিতিতেই তিনি পদত্যাগ করবেন না।’
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এর একটি বড় কারণ।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়; কিন্তু দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমেছে যে, তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না।
বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শ্রীলঙ্কায়। গত মাসে ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির মান পড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে খাদ্য-ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না দেশটি, ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা।
বিদ্যুৎ-খাদ্য-ওষুধ-জ্বালানি সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার জনগণ গত কিছু দিন ধরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন, এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোসহ দেশের সব বড় শহরে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা। জনরোষ সামাল দিতে শনিবার দেশজুড়ে তিন দিনের কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় দেশটির সরকার।
কারফিউয়ের দ্বিতীয় দিন, রোববার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ব্যাতীত ২৬ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন। একই দিন পদত্যাগ করেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও।
তারপর ০৬ এপ্রিল পদত্যাগ করেন গোতাবায়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে এমপিরা। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত ৪১ জন এমপি মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
তবে আন্দোলনরত জনগণ এতে সন্তুষ্ট নন। তারা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও তার বড়ভাই প্রধানমন্ত্রী মহিন্দারও পদত্যাগ চাইছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও কিছু এলাকায় রাজনীতিবিদদের বাসভবনে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর। মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘জনবিক্ষোভ থামাতে শ্রীলঙ্কার সরকার সামরিক পন্থার আশ্রয় নিচ্ছে; এবং এতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের কোনো সমাধান হবে না, উপরন্তু দেশটির সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার শঙ্কা আছে।’