বায়রা নির্বাচন ১৭ জানুয়ারী, রয়েছে শংকাও
- আপডেট সময় : ০৩:১৭:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 48
প্রবাসী কণ্ঠ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সীজ (বায়রা) এর দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন আগামী বছরের ১৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আবার যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়ার শংকাও রয়েছে। তবে বায়রা নির্বাচন বোর্ড গঠিত তফসিল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়কে সামনে রেখেই প্যানেল মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থনে নেতা-কর্মীদের প্রচারনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে।
নির্বাচনে জয়ী হতে ইতিমধ্যে বায়রা সদস্যদের নিয়ে গঠিত দুটি প্যানেল প্রতিনিয়ত ঢাকার বাইরের বিভিন্ন স্থানে সভা, কখনো গোপন বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। এসব বৈঠকে মুখরোচক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা ছাড়াও প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে কিভাবে ‘ঘায়েল’ করা যায় সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। সেভাবেই আয়োজিত অনুষ্ঠানে একে অপরের বিরুদ্ধে কৌশলী বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে আবার কোন কোন সদস্য নির্ধারিত তারিখে বায়রা নির্বাচন না করে পেছানোর কারন ব্যাখ্যা করে বানিজ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিচ্ছেন।
এদিকে গত ২৯ অক্টোবর বায়রা দ্বি-বার্ষিক (২০২৫-২০২৭) নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৭ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ গঠনের উদ্দেশ্য ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারী শনিবার (সম্ভাব্য স্থান) বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য তফসিল ঘোষনা করা হয়।
বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সীজ এর নির্বাচন বোর্ড চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন স্বাক্ষরিত তফসিল অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য প্রার্থী কর্তৃক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের শেষ দিন ছিলো। এদিন প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র পরীক্ষা ও প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে।
১৮ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র বাতিল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক নির্বাচন আপীল বোর্ডের কাছে আপীল দাখিলের সুযোগ পাবেন। ২১ ডিসেম্বর বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের উপর দাখিলকৃত আপত্তির উপর শুনানী গ্রহণ ও নিস্পত্তি করা হবে।
২২ ডিসেম্বর বৈধ প্রার্থীদের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে তফসিলে উল্লেখ রয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকছে। প্রার্থীতা প্রত্যাহার শেষে নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
২৮ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পর বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা নির্বাচনযোগ্য পদের সমান বা তদপেক্ষা কম হলে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হবে না এবং এরুপ প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষনা করা হবে।
শিডিউল অনুযায়ী ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারী বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনা করা হবে।
উল্লেখ্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বায়রার চিহ্নিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত সিন্ডিকটের নিয়ন্ত্রণে রাখা না রাখা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বায়রা নির্বাচন হচ্ছিলো না বলে অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে মামলা পাল্টা মামলাও হয়েছে। যদিও বানিজ্য মন্ত্রনালয় সব সময় চেয়েছে বায়রা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হউক। অবশেষে চিঠি চালাচালির পর জনশক্তি কর্মসংস্থাণ ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো: আশরাফ হোসেনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর শুরু হয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
অবশ্য এরআগে থেকেই বায়রার প্রবীন ও নবীন সদস্যদের সম্বন্বয়ে দুটি প্যানেলের সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন নামকরা হোটেল, রিক্রুটিং এজেন্সীর অফিসে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আসন্ন নির্বাচনে কে প্যানেল প্রধান হবেন তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা কল্পনা। অবশেষে দুটি প্যানেল থেকে দুজন প্যানেল প্রধানের নাম জানাজানি হয়।
বিগত সময়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যারা ১০, ২৫, ১০১ জনের সম্বন্বয় করে সিন্ডিকেট করে একচেটিয়া ব্যবসা করেছিলেন তাদের মনোনীত থাকছে একটি শক্তিশালী প্যানেল। তাদের বিপরীতে থাকছে সিন্ডিকেট বিরোধী স্লোগান দেয়া অপর একটি প্যানেল।
দুটি প্যানেলের পক্ষ থেকেই নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা জোরেশোরে শুরু হয়েছে। দুটি প্যানেলই এবার নির্বাচনে জয়ী হতে দৌড়ঝাপ করছেন।
গতকাল ফকিরাপুলের মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের সাথে কাজ করেছেন এমন একজন প্রবিন বায়রা সদস্য প্রবাসী কণ্ঠের প্রতিবেদককে বলেন, আসলে আমাদের বায়রা নির্বাচনটা অনেক দিন ধরে বন্ধ আছে। আমরা সবাই চাচ্ছি যেই জিতুক, নির্বাচনটা হয়ে যাক। নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে আমাদের ব্যবসা বানিজ্যর সমস্যা নিয়ে কথা বলতে সুবিধা হয়। আমাদের পক্ষ থেকে প্যানেল প্রধান হিসাবে কাজি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মফিজুর রহমান ভাইয়ের নির্বাচন করার কথা ছিলো। কিন্তু এবার তিনি জাতীয় নির্বাচন করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। যতটুকু জানি আমাদের প্যানেল প্রধান হিসাবে গফুর সাবেহকে মনোনীত করা হয়েছে। অপরদিকে সিলভার লাইন গ্রুপের সেলিম সাহেব প্রতিপক্ষ প্যানেল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা কিভাবে নির্বাচন করবো? আমাদের নামে তো একের পর এক মামলা দিয়েই যাচ্ছে। সিআইডির তদন্ত শেষ হয়েছে। বাদী আদালতে না রাজি দিলে সেই মানবপাচার মামলার তদন্ত আবার নতুন করে ডিবিকে তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আজ এ সংক্রান্ত চিঠি পেলাম। এখন কথা বেশী বললে আরো মামলা হতে পারে। তাই চুপচাপ আছি। তবে আমাদের নেতা রুহুল আমিন স্বপন সাহেবসহ অন্যরা দেশের বাইরে আছেন। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুললে আমাদের নেতাদের সহযোগিতা লাগবেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ গ্রুপের যাকে প্যানেল প্রধান করা হয়েছে, এক সময় তিনিও কিন্তু মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাপক বির্তকের জন্ম দিয়েছিলেন। আমাদের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নিয়ে আমরা বিভিন্ন বক্তব্য দেয়ার সময় সদস্যদের বলবো। তাছাড়া ওই প্যানেলে ফখরুল ইসলাম নামের একজন ধুরন্ধর ব্যবসায়ী আছেন। তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদে নির্বাচন করবেন বলে শুনছি। তিনি তো বিগত সিন্ডিকেটের দুটি লাইসেন্সের মাধ্যমে অনেক লোক মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। হাজার হাজার মেডিকেল করেছেন। এসব তথ্য গোয়েন্দা সংস্থা এসবি রিপোর্টে উঠে এসেছে। যদিও ফখরুল সাহেব এসব অস্বীকার করছেন। কিন্তু তিনি অস্বীকার করলে কি হবে? সাধারন সদস্যরা জানেন, তিনি কি সিন্ডিকেটে কাজ করেছিলেন কি না?
অপরদিকে প্রতিপক্ষ সিলভার সেলিম প্যানেলের দায়িত্বশীল একজন সিনিয়র সদস্য প্রবাসী কণ্ঠের প্রতিবেদককে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যারা সিন্ডিকেট করেছিলো তাদের আর এবার সাধারণ সদস্যরা ভোট দেবে না। তাদের কারনে পুরো শ্রমবাজারটা ধ্বংস হয়েছে। আমাদের এবার প্যানেল প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন ডায়নামিক নেতা এম এ এইম সেলিম ভাই।
সেলিম সাহেবের প্যানেল থেকে ফখরুল ইসলাম নির্বাচন করছেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি যে সিন্ডিকেটের লোক ছিলেন এটা জানাজানি হওয়ার পর আমাদের প্যানেল থেকে তাকে সরিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এসময় তার পাশে বসান প্রবিন একজন বায়রা সদস্য বলে উঠেন, উনি (ফখরুল ইসলাম) নির্বাচন করলে তো আমিই ভোট দেবো না, এমন কি ভোট দিতেও যাবো না বলে মন্তব্য করেন।
তবে ওই সদস্য বলেন আমি আশাবাদি, এবার নির্বাচন হলে আমরা বিপুল ভোটে জয়ী হবো। তবে তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, যতটুকু জানি বায়রা নির্বাচন স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি করেন এমন একজন সদস্য বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন মার্চে করার জন্য অনুরোধ করেছেন। এছাড়া আরো একটি কারন আছে। সেটি এখনই বলবো না। তবে ড্রাফট রেডি আছে। তারমতে বানিজ্য মন্ত্রনালয়ে দেয়া চিঠি বিবেচনায় নেয়া হলে তখন নির্বাচন মার্চের আগে না হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিউজটি শেয়ার করুন










