ফেসবুকে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশগামীদের সাথে প্রতারনা, টাস্কফোর্স নীরব

- আপডেট সময় : ১২:৫৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 19
প্রবাসী কণ্ঠ প্রতিবেদক:
সৌদি আরবের আল নাদেক হোটেলে কর্মী নিয়োগ করা হবে। ডিউটি ১২ ঘণ্টা। বেতন ১২ শ’ রিয়াল। আকামা, থাকা ও খাওয়া কোম্পানির। আকামা দুই বছর নবায়নযোগ্য। মেডিক্যাল, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ জমা দিলে সাত দিনের মধ্যে ভিসা। ভিসা পাওয়ার ২০ দিনের মধ্যে ক্যানসেল বা রিপ্লেসমেন্ট হবে না। মাস্ক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (আরএল-১১১০)। এভাবেই মাস্ক ভিসা, টিকিট, হজ, ওমরাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে বিদেশগামী কর্মীদের নানাভাবে প্রলোভনে ফেলার চেষ্টা করছে বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুধু যে মাস্ক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস নামক প্রতিষ্ঠানের লোকজনই এমন অনিয়ম করছে তা কিন্তু নয়; প্রতিদিন বিদেশে কর্মী পাঠানোর সাথে সম্পৃত্ত এমন হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুক গ্রুপে রিক্রুটিং ও ট্রাভেল এজেন্সির পক্ষে এজেন্টরা বিজ্ঞাপন আকারে বিজ্ঞপ্তি ডিজাইন করে কর্মী নেয়ার চাহিদার কথা জানানো হচ্ছে। এ চক্রটি কখনো কখনো এজেন্সির হয়ে কাজ করা তাদের নারী স্টাফদের দিয়েও বিদেশগামী ও এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট এজেন্টদের টেলিফোন নাম্বারে ফোন করে সরাসরি চাহিদার কথা বলানো হচ্ছে। ওই নারী কণ্ঠের মহিলারা বলছেন, আপনার কি বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা আছে। আমাদের অফিসে সৌদি আরবের বেশ কিছু ভালো ভিসা আছে। আপনি ইচ্ছুক হলে পাসপোর্ট নিয়ে সরাসরি আমাদের অফিসে চলে আসেন স্যার। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত মানুষকে টেলিফোন করে বিদেশে কর্মী পাঠানোর ভিসা রয়েছে জানিয়ে পাঠানোর অনুরোধ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ দিকে এসব অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে চললেও যাদের দেখার কথা সেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এনফোর্সমেন্ট এন্ড মনিটরিং সেলের সংশ্লিষ্টরা অনেকটাই নিস্ক্রিয় বলে অনেকের অভিযোগ। টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা জানতে যোগাযোগ করা হলে তারা সেই টেলিফোনটি ধরারও সময় পান না।
গত রোববার রাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট অনুবিভাগের যুগ্মসচিব এ জেড এম নুরুল হকের সাথে বারবার যোগাযোগ করার পরও তিনি টেলিফোন ধরেননি। যার কারণে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
‘একমাত্র সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত বৈধভাবে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক যাচ্ছে। এ ছাড়া কাতার, কুয়েত, জর্দান, লেবানন, জাপানসহ অন্যান্য শ্রমবান্ধব যেসব দেশে কর্মী যাচ্ছে সৌদি আরবের তুলনায় তা অনেক কম। শ্রমবাজারে হঠাৎ কিছুটা ছন্দপতন ও মালয়েশিয়াসহ ১০টি শ্রমবাজার এখনো বন্ধ থাকার কারণে এ সুযোগে কতিপয় জনশক্তি ব্যবসায়ী ইউরোপ, কানাডা, সার্বিয়া, রোমানিয়া, ইউকে, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রসেসিং এবং কম খরচে মধ্যেপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা দিয়ে লোক পাঠানোর আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন তৈরি করে বিদেশগামীদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছেন ফেসবুক, হোয়াসটঅ্যাপ গ্রুপ। সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক কাজের ভিসা ও বেতনের সুযোগ সুবিধা উল্লেখ করে বিজ্ঞাপন দেয়ায় অনেকে বিভ্রান্তও হচ্ছেন। তবে এদের খপ্পরে পড়ে কত বিদেশগামী কর্মী টাকা পয়সা খুইয়েছেন সে ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে জানা সম্ভব হয়নি। তবে জনশক্তি ব্যুরোতে যত অভিযোগ জমা পড়ছে সেগুলো খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জনৈক এজেন্সি মালিক জানান।
গতকাল ঢাকার কাকরাইলের রাজমনি ঈশা খাঁ ভবনের দোতলার রৌমারি ওভারসিস নামক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং পার্টনার মোহাম্মদ সেলিম বলেন, যারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক সংগ্রহ ও ঠকানোর চেষ্টা করছে তাদের পুরো প্রক্রিয়াটাই কিন্তু অবৈধ। এসব বিজ্ঞাপন তারা কোনোভাবেই দিতে পারে না। বিদেশে লোক পাঠানোর বিজ্ঞপ্তি দিতে হলে অবশ্যই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে আগে। সেই অনুমতি না থাকলে যারা এসব বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তাদের চিহ্নিহ্নত করা উচিত এবং দ্রত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনিক গ্রুপ অফ কোম্পানির পক্ষে হোয়াটসআ্যপ গ্রুপে গত ৮ আগস্ট দেয়া এক স্ট্যাটাসে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক আইডি থেকে (০১৭০৫২৬৩১৫৫) বলা হয়, দয়া করে কাতারে বই দ্রুত জমা দিন। কারণ আগামী মাস থেকে কাতারের ভিসা বন্ধ করে দেয়ার সম্ভাবনা বেশি, প্লিজ। এর পরদিন আরেক স্ট্যাটাসে একই গ্রুপ থেকে বলা হয়, কাতারে জরুরি নিয়োগ। কার্পেন্টার সাতারিং ১০০ জন, রড বাইন্ডার ৫০ জন। রাজমিস্ত্রি ৫০০ জন। বেতন ১৭০০ রিয়াল। ১০ ঘণ্টা ডিউটি। থাকা কোম্পানির খাওয়া নিজের। হেলপার বেতন ১৫০০ রিয়াল। এভাবে বিদেশে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়াটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। একইভাবে আমায়া ইন্টারন্যাশনাল (অনিক গ্রুপ অফ কোম্পানি)-এর পক্ষে সর্বশেষ যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে সৌদি আরবে ডাইরেক্ট নাসির আল শামরি কোম্পানিতে ২০০ জন মসজিদ ক্লিনার এর বই আগামীকাল থেকে জমা নেবো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সৌদি আরব রেফারেন্স-৩২০। বেতন ১২ শ’ রিয়াল। ডিউটি আট ঘণ্টা। নোটিশ : যে সব এজেন্টের কাছে রেডি বই আছে একমাত্র তারা যোগাযোগ করবেন। যোগাযোগ নাম্বার ০১৭৭৩৪৬৪২১৭৯। ঠিকানা ট্রপিকানা টাওয়ার ৪৫ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার আগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (কর্মসংস্থান) মোহাম্মদ আব্দুল হাই-এর সাথে তার দফতরে দেখা করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিদেশে লোক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কর্মকাণ্ড। যারা এসব করছে তারা অপরাধ করছে। এটি আমাদের নজরে এসেছে। যাদের নাম (রিক্রুটিং এজেন্সি) পাবো তাদেরকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকারের নজরে এলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তিনি এসব প্রতারকদের ফাঁদে না পড়তে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন।
নিউজটি শেয়ার করুন
