মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে
- আপডেট সময় : ০৯:২৭:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
- / 337
ঢাকা: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি জানান, এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে।
র্যাবের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বক্তব্যের একপর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনভাবে আমেরিকার সরকার র্যাবের এবং এর কতিপয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রসেস কালকে হবে না। সময় লাগবে। আমাদের ধৈয্য ধরতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমেরিকারদের সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌছতে পারব। আমার বিশ্বাস র্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাঙ্কশন তুলে নেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন লবিষ্ট প্রতিষ্ঠান, আমাদের প্রতিপক্ষের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান, তারা আমেরিকার সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনা প্রকাশ করেনি। সেই সঙ্গে পৃথিবীকে বড় বড় যেসব মানবাধিকার সংস্থা আছে তাদেরকেও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করতেছে যে, ‘র্যাব খুব খারাপ’ প্রতিষ্ঠান। র্যাব ‘বাই অ্যান্ড লার্জ’ জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে এরকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠান, যেটা দেশের সন্ত্রাস, মাদক বন্ধ করেছে। মানবপাচার মোটামুটিভাবে বন্ধ করেছে। আমেরিকার সরকারের পলিসি হচ্ছে টেরোরিস্টম হিউম্যান ট্রাফিকিং ও ড্রাগ কমানো। র্যাব এই কাজগুলোই করে। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তারা এই কাজ করে। সেই একটা বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু লোকজন বিভিন্ন রকমের ভুল তথ্য দিয়ে এই স্যাঙ্কশনটা দিয়েছেন।
আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের র্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে, তার জন্য তারা পৃথিবীর টেরোরিস্ট অর্গানাইশেন হিসেবে বিবেচিত হবে। বরং টেরোরিস্টের বিরুদ্ধে তাদের কাজ। র্যাবের কারণেই হোলি আর্টিজানের পর থেকেই… স্বয়ং আমেরিকার স্ট্রেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। হোলিআর্টিজানের পরে আর কোনো লোক সন্ত্রাসবাদে মারা যায়নি। বাংলাদেশ এরকম দেশ যেখানে খুব উত্তপ্ত ছিল, সেখানে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। স্যাঙ্কশন দেওয়ার পর আমেরিকার সরকার আমাকে জানান। জানার পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করি। আমার আলাপ অত্যন্ত পজিটিভি ছিল। এসব সমস্যা দূরীভূত করার জন্য যদি কোনো অভিযোগ থাকে তা নিরসনের জন্য আমাদের নাম্বার’স অব ডায়ালগ আছে। তিনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, সেগুলো তিনি করবেন।
মন্ত্রী বলেন, আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। তাছাড়া রয়েছে ইকোনমিক পার্টানারশিপ। আমরা আমেরিকারদের সাথে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছতে পারব। আমার বিশ্বাস র্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাঙ্কশন তুলে নেবেন। বিশ্বাস করি এই নিষেধাজ্ঞা আমরা প্রত্যাহার করাতে পারব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১২টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা ও অনুমান এখানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভায়োলেট করছে। তাদের ভাষায় বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে নিযুক্ত আছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এজন্য তারা বাংলাদেশের র্যাবকে পিচকিপিংয়ে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তারা গত নভেম্বরের ৮ তারিখে চিঠি দিয়েছে। দুই মাস হলো ইউএন এটা পেয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনের স্পোকপারর্সন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতিসংঘ যখনই কাউকে পিচকিপিংয়ে নেয় তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করে কাজটি দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস এসব অপপ্রচারণা এবং দুরভিসন্ধিমূলক কাজ যেটা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। র্যাব তো একটা ভালো প্রতিষ্ঠান। তাদের রিমরালাইজস করার জন্য এই অপচেষ্টা যারা করছে, আমি বিশ্বাস করি তারাই এজন্য দুঃখিত হবেন। এ রকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য যারা যে উদ্যোগ গ্রহণ নিয়েছে, এজন্য তারা লজ্জিত হবেন। দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানাই, যাতে দেশের অমঙ্গল ডেকে না আনা হয়।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানের কাছে প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে তারা চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে তারা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তারা এও বলেছেন, বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা রোহিঙ্গাকে প্রশ্রয় নেওয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র ও দুরভিন্ধিতে বিশ্বাস করে না।