অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: গোয়ালন্দ পৌরবাসি জন্মলগ্ন থেকেই সুবিধাবঞ্চিত

- আপডেট সময় : ১২:১১:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
- / 7
মো:শাজাহান শেখ, জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী,
রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগে দক্ষিন বঙ্গের প্রবেশদার খ্যাত গোয়ালন্দ উপজেলা। পদ্মা পাড়ে অবস্থিত এই উপজেলায় রয়েছে চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা।
বছরের পর বছর ধরে পদ্মা নদীর ভাঙনে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম এর অধিকাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছোটভকলা ও উজানচর ইউনিয়নের অংশ বিশেষ নিয়ে ২০০০ সালের ১৩ জানুয়ারী ৪.৮৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে গঠিত হয় গোয়ালন্দ পৌরসভা। এই পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ৫টি মৌজা রয়েছে।
২০২৪ সালের আদমশুমারীর তালিকা ও পৌরসভার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৩৭৮০২ জনসংখ্যার ১৮৩৭৪ জন ভোটার আছে। এরমধ্যে পুরুষ ৯০৯৬, মহিলা ৯২৭৮, ভোটার জন।
পৌরসভা গঠিতকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার তৎকালীন গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: নুরুজ্জামান মিয়াকে পৌর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি ২০০২ সালে ২৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সালের ১৩ মে পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে গোয়ালন্দের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মরহুম ইদ্রিস আলী শেখের বড় ছেলে শেখ মোঃ নিজাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত (পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ নেতা) হন। তিনি একাধারে তিন তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২১ সালের নির্বাচনে গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মন্ডল তাকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি জুলাই বিল্পব আন্দোলনের পর ২০২৫ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিলেন। এরপর তিনি পালিয়ে যান। বর্তমান অন্তবর্তিকালীন সরকারের আদেশক্রমে সারাদেশের ন্যায় গোয়ালন্দ পৌরসভা প্রশাসক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নাহিদুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন।
পৌরসভা গঠন হওয়ার শুরু থেকে আওয়ামীলীগ সরকারের শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের লোকজনের হাতেই ছিল। শুরু থেকে এযাবতকাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছরে এই পৌরসভার বাসিন্দারা তেমন কোন উন্নয়ন সুবিধা পায় নাই বললেই চলে। তবে এই দীর্ঘ সময়ে ৯৬ শতাংশ জমির উপর স্থাপিত হয়েছে পৌরভবন। ২০১২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণী ও ২০১৬ সালে প্রথম বা ক-২ শ্রেনীতে উন্নীত হয়। কিন্তু পৌরবাসির নাগরিক সুবিধার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলেই যত্রতত্র কাঁদা পানি আটকে নর্দমা সৃষ্টি হয়ে মশা-মাছি উপদ্রুত হয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়। নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ময়লার ভাগার। হাটবাজারে নেই পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা। দুই/এক জায়গায় থকলেও তদারকি না থাকায় নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ কাঁচা সড়ক, কিছু পাকা সড়ক থাকলেও ভাঙ্গাচোড়া খানাখন্দ, ভাঙ্গাচোড়া সেতু কালভার্ট। তাতে নেই পর্যাপ্ত সড়ক বাতি। কোথাও নেই বিশুদ্ধ সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা। কোথাও গড়ে ওঠেনি একটি মার্কেট। নেই বেকারদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা। লক্ষ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি। পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন ভাতা পায়না।
পৌরসভার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন, শাজাহান শেখ, বক্কার শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ততোদিন ধরে পৌরসভা হয়েছে ততোদিন আওয়ামীলীগের অধিনে। তারাই পৌরসভার দায়িত্বে রয়েছে। পৌরসভার কোন উন্নতি হয় নাই। আমরা গ্রামে আছি নাকি শহরে আছি কিছুই বুঝি না।
সবমিলিয়ে পৌর প্রশাসনের প্রতি পৌরবাসির রয়েছে চরম ক্ষোভ আর হতাশা।
নিউজটি শেয়ার করুন
