আজ আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / 140
মালয়েশিয়ায় নতুন সরকার গঠনের পর মন্ত্রী পর্যায়ের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানোর সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা উল্টো-পাল্টা হয়। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব ঠিক করতেই আসছেন। তার সফরে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে যেসব মধ্যস্বত্বভোগী চক্র রয়েছে তা দূর হবে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা হয়ত স্বল্প খরচেই মালয়েশিয়া যেতে পারবেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার বিকেলে একটি প্রাইভেট জেট বিমানে ঢাকায় পৌঁছাবেন। তার নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে অবস্থান করবেন। সফরের প্রথমদিন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সেনা কল্যাণ ওভারসিস এপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে রাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেবেন তারা।
সফরের দ্বিতীয় দিন সকাল দশটায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন মালয়েশিয়ান প্রতিনিধি দল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর করার বিষয়ে বিশদ আলোচনা হবে। তার সফরে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও গতি সঞ্চারে সহায়ক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, আশির দশক থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক গেলেও দেশটির সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার আইনি ভিত্তি পায় ২০১৬ সালে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের পর মালয়েশিয়া সরকার লেবার সোর্স কান্ট্রি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় অর্থাৎ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা করবে, হঠাৎ করে শ্রম নিয়োগ বন্ধ করতে পারবে না। জি-টু-জি পদ্ধতিতে ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। তবে ২০১৮ সালে শ্রমিক পাঠানোতে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ বেসরকারিভাবে শ্রমিক আমদানি বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারটি বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয় ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীদের দক্ষতা ও চাহিদা রয়েছে অনেক। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের পদ্ধতি যেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূলে রয়েছে উভয় দেশের সরকার নির্ধারিত পদ্ধতি, আর্থিক খরচের বাইরে কিছু অলিখিত পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া। ধারণা করা হচ্ছে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে শ্রমিক নিয়োগের জটিলতা নিরসনে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। করোনার পর গতবছরে নতুন করে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। কিন্তু শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং সিন্ডিকেটের ফলে শ্রমিক পাঠানোতে গতি কমে যায়। এখনো সেখানে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া খুবই ধীর।
এরমধ্যেই গতবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ প্রোগ্রামের কেতাবী নাম ‘লেবার রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম’। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য দেশটিতে বিভিন্ন খাতে কাজ করা অবৈধ শ্রমিকদের যেন তাদের মালিকেরা বৈধভাবে নিয়োগ করতে পারেন। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ অবশ্য নির্দিষ্ট করে দেয়, কোন কোন খাতে আর কোন কোন দেশের শ্রমিকেরা এ সুবিধা নিতে পারবেন। তালিকায় শীর্ষেই থাকে বাংলাদেশ।
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কতজন বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিক রয়েছে, তার নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে দুই থেকে আড়াই লাখের বেশি অনথিভুক্ত বাংলাদেশী আছেন বলে ধারণা করা হয়। এ বছরের শুরুতে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম অবৈধ অভিবাসীদের রিক্যালিব্রেশন প্ল্যান ২.০ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। সেদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফ উদ্দিন ইসমাইল চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনথিভুক্ত অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
আটটি খাতে নিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসী কর্মীদের বৈধতার অনুমতি দেবে মালয়েশিয়া। এগুলো হলো উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তারক্ষী, সেবা, কৃষি, বাগান ও বিদেশী গৃহকর্মী। এসব খাতে বৈধতার জন্য কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর হতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ সফরে দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করাসহ নতুন শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং স্বচ্ছতার আনার বিষয়ে আলোচনা হবে।