ঢাকা ১০:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১১১ সংখ্যাটি অনেক কিউট ও স্লিম

  • আপডেট সময় : ১২:২০:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২
  • / 227
প্রবাসী কণ্ঠ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ১১১ টাকা!!! এয়ালাইন্স ব্যবসাকে থমকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
কথিত আছে, ভাইস অ্যাডমিরাল নেলসন যুদ্ধে আহত হয়ে তাঁর একটি পা, একটি হাত এবং একটি চোখ হারান। তাঁর সেই হতভাগ্য পরিণতির কথা স্মরণ করেই ১-১-১-এর এই বিশেষ নামকরণ। এরই ধারাবাহিকতায় ২২২ বা ৩৩৩-কেও কেউ কেউ ‘আনলাকি’র কাতারে ফেলে থাকেন। এ কারণেই ‘১১১’ ক্রিকেটে একটি অপয়া স্কোর!

দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের এভিয়েশনে ক্রিকেটের অপয়া সংখ্যাটিকে বরণ করতে হয়েছে। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। কিছুদিন আগে দেখতে পেয়েছিলাম বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আরেকটি অপয়া সংখ্যা “১৩” যা সর্বজন স্বীকৃত, সেই সংখ্যাটিও বেছে নিয়েছিলো। গত এপ্রিলে একসংগে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে ১৩ টাকা যা ছিলো অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি।

আপনারা জেনে থাকবেন, বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এয়ারক্রাফটে আসন সংখ্যার যে সিরিয়াল থাকে সেখানে ১৩ সিরিয়ালকে ইচ্ছাকৃত পরিহার করে থাকে। কথিত ১৩ সংখ্যাটি আনলাকি হিসেবে চিহ্নিত থাকায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ১৩ সিরিয়ালকে পরিহার করে থাকে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতভাবেই অপয়া সংখ্যাগুলোকেই বাংলাদেশ এভিয়েশনের সাথে যুক্ত করে দিচ্ছে, যা কাম্য হতে পারে না।

গত চার মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১ টা প্রতি লিটারে আর কোভিডকালীন সময়সহ গত ১৯ মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতি লিটারে ৬৫ টাকা। যা এভিয়েশন ব্যবসাকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগ বাংলাদেশে সব সময়ই অতিমাত্রায় রিস্ক বহন করেছে। এ জন্যই গত ২৫/২৬ বছরে বেসরকারী বিমান পরিবহনের সময়কালে মাত্র ১০ থেকে ১১ টি বিমানসংস্থা বাংলাদেশ এভিয়েশনে বিনিয়োগ করে। তার মধ্যে ৮ থেকে ৯টি বিমান সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এ পিছনে অনেক কারনের মধ্যে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম কারন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আছে।

কোভিডকালীন সময়ে সারা পৃথিবীর সকল এয়ারলাইন্স চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশের সরকার কিংবা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এভিয়েশন ও ট্যুরিজমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এয়ারলাইন্স ও ট্যুরিজম কোম্পানীর পাশে এসে দাড়িয়েছে। নানাধরনের প্রনোদনা, ভর্তুকি, চার্জ মুওকুফসহ নানাবিধ কারযক্রম দেখেছি। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে উল্টোচিত্র চোখে পড়েছে। করোনা মহামারির সময়ে এয়ারলাইন্সগুলোর পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত এ্যারোনোটিক্যাল ও নন-এ্যরোনোটিক্যাল চার্জ কমানোর অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। দফায় দফায় জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে, এয়ারপোর্ট ডেভেল্পমেন্ট ফি, সিকিউরিটি চার্জ যুক্ত করে এভিয়েশন খাতকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

ব্যাকলক চার্জগুলোর সারচার্জ বছরে ৭২ শতাংশ যা সহজেই অনুমেয়, এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসাকে অনগ্রসর হতে সহায়তা করছে। যেসকল এয়ারলাইন্স ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে, তাদেরও একটি অন্যতম দাবি ছিলো সারচার্জ কমানোর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি দাবিগুলো চিরন্তন সত্যের মতো বাংলাদেশ এভিয়েশনে রয়ে যাচ্ছে। আর এয়ারলাইন্সগুলো ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ সমাধানের উদ্যেগ নিচ্ছে না।

এই এভিয়েশনের সাথে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি, হোটেল ইন্ডাস্ট্রির সাথে লক্ষ লক্ষ কর্মচারী-কর্মকর্তা জড়িত। জড়িত তাদের পরিবার। প্রো-একটিভ হয়ে এ সকল বাস্তব সমস্যাগুলো সমাধানে কেউ নেতৃত্ব নেয়ার দাবি এখন সময়ের প্রয়োজনে উল্লেখ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের এক বৃহৎ জনগোষ্টি যারা কাজের প্রয়োজনে, শিক্ষার প্রয়োজনে, ভ্রমন কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আকাশ পথে যাতায়াত করছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের প্রায় ৭০ ভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশী এয়ারলাইন্স এর কাছে। যদি জেট ফুয়েলসহ অন্যান্য চার্জগুলো এযারলাইন্সগুলোর অনুকূলে না থাকে তবে এই এভিয়েশন মার্কেট শেয়ার পুরোটাই চলে যাবে বিদেশী এয়ারলাইন্স এর কাছে। তখন আমাদের জিডিপির অংশীদারিত্ব কমে যাবে। যা দেশের আয়ের উপর প্রভাব পড়বে। দেশের ট্যুরিজম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেকার সমস্যার সৃষ্টি হবে।

যেকোনো অপয়া সংখ্যা কিংবা অপয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এভিয়েশন সেক্টরকে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে সুস্থ প্রতিযোগিতা করার পরিবেশ তৈরী করে দিন। সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ পেলে এভিয়েশন সেক্টর বাংলাদেশে উন্নয়নের সোপানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

লেখক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

১১১ সংখ্যাটি অনেক কিউট ও স্লিম

আপডেট সময় : ১২:২০:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২

প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ১১১ টাকা!!! এয়ালাইন্স ব্যবসাকে থমকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
কথিত আছে, ভাইস অ্যাডমিরাল নেলসন যুদ্ধে আহত হয়ে তাঁর একটি পা, একটি হাত এবং একটি চোখ হারান। তাঁর সেই হতভাগ্য পরিণতির কথা স্মরণ করেই ১-১-১-এর এই বিশেষ নামকরণ। এরই ধারাবাহিকতায় ২২২ বা ৩৩৩-কেও কেউ কেউ ‘আনলাকি’র কাতারে ফেলে থাকেন। এ কারণেই ‘১১১’ ক্রিকেটে একটি অপয়া স্কোর!

দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের এভিয়েশনে ক্রিকেটের অপয়া সংখ্যাটিকে বরণ করতে হয়েছে। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। কিছুদিন আগে দেখতে পেয়েছিলাম বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আরেকটি অপয়া সংখ্যা “১৩” যা সর্বজন স্বীকৃত, সেই সংখ্যাটিও বেছে নিয়েছিলো। গত এপ্রিলে একসংগে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে ১৩ টাকা যা ছিলো অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি।

আপনারা জেনে থাকবেন, বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এয়ারক্রাফটে আসন সংখ্যার যে সিরিয়াল থাকে সেখানে ১৩ সিরিয়ালকে ইচ্ছাকৃত পরিহার করে থাকে। কথিত ১৩ সংখ্যাটি আনলাকি হিসেবে চিহ্নিত থাকায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ১৩ সিরিয়ালকে পরিহার করে থাকে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতভাবেই অপয়া সংখ্যাগুলোকেই বাংলাদেশ এভিয়েশনের সাথে যুক্ত করে দিচ্ছে, যা কাম্য হতে পারে না।

গত চার মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১ টা প্রতি লিটারে আর কোভিডকালীন সময়সহ গত ১৯ মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতি লিটারে ৬৫ টাকা। যা এভিয়েশন ব্যবসাকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগ বাংলাদেশে সব সময়ই অতিমাত্রায় রিস্ক বহন করেছে। এ জন্যই গত ২৫/২৬ বছরে বেসরকারী বিমান পরিবহনের সময়কালে মাত্র ১০ থেকে ১১ টি বিমানসংস্থা বাংলাদেশ এভিয়েশনে বিনিয়োগ করে। তার মধ্যে ৮ থেকে ৯টি বিমান সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এ পিছনে অনেক কারনের মধ্যে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম কারন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আছে।

কোভিডকালীন সময়ে সারা পৃথিবীর সকল এয়ারলাইন্স চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশের সরকার কিংবা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এভিয়েশন ও ট্যুরিজমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এয়ারলাইন্স ও ট্যুরিজম কোম্পানীর পাশে এসে দাড়িয়েছে। নানাধরনের প্রনোদনা, ভর্তুকি, চার্জ মুওকুফসহ নানাবিধ কারযক্রম দেখেছি। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে উল্টোচিত্র চোখে পড়েছে। করোনা মহামারির সময়ে এয়ারলাইন্সগুলোর পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত এ্যারোনোটিক্যাল ও নন-এ্যরোনোটিক্যাল চার্জ কমানোর অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। দফায় দফায় জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে, এয়ারপোর্ট ডেভেল্পমেন্ট ফি, সিকিউরিটি চার্জ যুক্ত করে এভিয়েশন খাতকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

ব্যাকলক চার্জগুলোর সারচার্জ বছরে ৭২ শতাংশ যা সহজেই অনুমেয়, এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসাকে অনগ্রসর হতে সহায়তা করছে। যেসকল এয়ারলাইন্স ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে, তাদেরও একটি অন্যতম দাবি ছিলো সারচার্জ কমানোর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি দাবিগুলো চিরন্তন সত্যের মতো বাংলাদেশ এভিয়েশনে রয়ে যাচ্ছে। আর এয়ারলাইন্সগুলো ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ সমাধানের উদ্যেগ নিচ্ছে না।

এই এভিয়েশনের সাথে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি, হোটেল ইন্ডাস্ট্রির সাথে লক্ষ লক্ষ কর্মচারী-কর্মকর্তা জড়িত। জড়িত তাদের পরিবার। প্রো-একটিভ হয়ে এ সকল বাস্তব সমস্যাগুলো সমাধানে কেউ নেতৃত্ব নেয়ার দাবি এখন সময়ের প্রয়োজনে উল্লেখ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের এক বৃহৎ জনগোষ্টি যারা কাজের প্রয়োজনে, শিক্ষার প্রয়োজনে, ভ্রমন কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আকাশ পথে যাতায়াত করছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের প্রায় ৭০ ভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশী এয়ারলাইন্স এর কাছে। যদি জেট ফুয়েলসহ অন্যান্য চার্জগুলো এযারলাইন্সগুলোর অনুকূলে না থাকে তবে এই এভিয়েশন মার্কেট শেয়ার পুরোটাই চলে যাবে বিদেশী এয়ারলাইন্স এর কাছে। তখন আমাদের জিডিপির অংশীদারিত্ব কমে যাবে। যা দেশের আয়ের উপর প্রভাব পড়বে। দেশের ট্যুরিজম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেকার সমস্যার সৃষ্টি হবে।

যেকোনো অপয়া সংখ্যা কিংবা অপয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এভিয়েশন সেক্টরকে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে সুস্থ প্রতিযোগিতা করার পরিবেশ তৈরী করে দিন। সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ পেলে এভিয়েশন সেক্টর বাংলাদেশে উন্নয়নের সোপানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

লেখক :
মোঃ কামরুল ইসলাম
মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স