সিন্ডিকেট দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে না : বায়রা
- আপডেট সময় : ০৪:৫৪:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ মে ২০২২
- / 385
প্রবাসী কন্ঠ প্রতিবেদক :
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেলে অভিবাসন খরচ বাড়বে এবং তা দেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। শ্রমিকদের কল্যাণে ২১ রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে শ্রমবাজারের ভার না দিয়ে নিবন্ধিত সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে মালয়েশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর পরামর্শ দেন বক্তারা। শনিবার (২১ মে) রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটন ঢাকায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলে বক্তারা। গোলটেবিল বৈঠকটি আয়োজন করে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার ‘সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোট’।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, গত ৪০ বছরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ৬-৭ বছর খোলা ছিল। প্রতিবারই দেখা যায়— আগের নিয়ম ভুল ছিল, তারা আরও ভালো করতে চায়। ভালো করতে গিয়ে দেখা যায়— আরও বেশি দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। মালয়েশিয়ায় যখনই নির্বাচন আসে তখনই বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়ার মাধ্যমে একটা ভালো ব্যবসা করার চেষ্টা করা হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবারও চুক্তি হলো কর্মী পাঠানোর। আমরা আবার আশাবাদী হলাম। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে— আবারও ঘুরে-ফিরে সেই সিন্ডিকেটের আলোচনা। আমি জানি না, পৃথিবীর এমন কোনো ঘটনা আছে কিনা মালয়েশিয়ার একজন মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে বলে যে— ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির বাইরে লোক নিবো না। এটা একটা অদ্ভুত ঘটনা। মালয়েশিয়া অন্যান্য দেশ থেকে যেভাবে কর্মী নেয় আর অন্যান্য দেশ থেকে যেভাবে নেয় পুরো প্রক্রিয়া আলাদা।
বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, জনশক্তির এই সেক্টর নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নানারকম ষড়যন্ত্র চলছে। এই সেক্টর ধ্বংস হয়ে গেলে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। আজকে শ্রমিকদের স্বার্থে অভিবাসন খাতে যারা কাজ করি তাদের স্বার্থে একটি অভিন্ন নীতি থাকা প্রয়োজন। এখানে কোটা ব্যবস্থা তৈরি করে এই সেক্টর ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তারা দেশের কল্যাণে কাজ করছে বলে আমরা সংজ্ঞায়িত করতে চাই না।
বায়রা’র সদ্য বিদায়ী কমিটির মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের যে অবস্থান তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন করতে চাই। বাংলাদেশ একটি বড় সোর্স কান্ট্রি। আমরা অনেক কথা দেখি, শুনি। মালয়েশিয়ার বাজারে এই ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেট চালু না করলে বাজার হারানোর কথা বলা হচ্ছে। সত্য হচ্ছে— মালয়েশিয়ায় কোনো দেশ থেকে কর্মী যাচ্ছে না। সেখানে আমাদের দেশের কর্মী ছাড়া মালয়েশিয়ার সামনে পথ নেই। মালয়েশিয়ায় আমাদের কর্মীর ব্যাপক চাহিদা আছে। কিন্তু মাঝখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু মানুষ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই শ্রমবাজার নষ্ট করছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে যাতে কোন চক্র এই বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে।
সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপার্সন সেকিল চৌধুরী বলেন, সেন্টার ফর এনআরবি প্রবাসীদের প্রয়োজনে যা কিছু প্রয়োজন তা করে আসছে। বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে যদি আমরা সুরক্ষা না দিতে পারি বাংলাদেশের অর্থনীতি কিন্তু বিপদজনক অবস্থায় চলে যাবে। আজকে রেমিটেন্স না আসলে ডলারের দাম যেটা ১০০ টাকা অতিক্রম করেছে সেটি ১৫০ টাকা হতো। এর পেছনে যারা কারিগর তারাই হচ্ছে এই রিক্রুটিং এজেন্সি। তাদের মাধ্যমে এদেশের মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। যার ফলে ২২-২৩ বিলিয়ন ডলার দেশে আসছে।
অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় ককাসের নির্বাহী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমি মনে করি আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার জায়গা হচ্ছে বায়রা শক্তিশালী না। আপনারা প্রচুর মানুষ বিদেশে পাঠিয়েছেন, দেশের চালিকা শক্তিতে অবদান রেখেছেন কিন্তু নিজেদের সংগঠনের মধ্যে ঐকমত্য আনতে পারেননি কখনো। আপনাদের নিজস্ব একটা উপলব্ধির সময় চলে এসেছে বলে আমি মনে করি।
বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার বলেন, যারা সিন্ডিকেট করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী বলেন, সিন্ডিকেট লাভ না লস সেটা আমাদের ভাবতে হবে। এই সিন্ডিকেট দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। এই সিন্ডিকেট দিয়ে দেশের কোনো লাভ নাই, এই সেক্টরের কোনো লাভ নেই।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট করার চেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তবে সরকারিভাবে এ সিন্ডিকেটের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সিন্ডিকেট চান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে অনেক আগেই সিন্ডিকেট হয়ে যেতো, সেটা হয়নি। উনি (সিন্ডিকেট) চাননি বলেই এখন পর্যন্ত হয়নি, এটা আমি মনে করি।’